রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বিপুল পরিমাণে কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গুদাম থেকে দুটি ভ্যানে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক ধান ব্যবসায়ী এসব সার ও বীজ নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। পরে আটক ভ্যান দুটির চালকের তথ্যে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরও ১৫৩ ধানবীজের বস্তা উদ্ধার করে পুলিশ।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ধানবীজ কীভাবে কৃষকের বাড়িতে গেল তা নিয়েও তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন পলাতক থাকায় তাঁকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। এ সময় দুটি ভ্যানে ধানবীজ ও সার নিয়ে যাওয়া হলে আমার সন্দেহ হয়। পরে তাঁদেরকে আটক করে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যাই। ভ্যানচালকেরা এক ব্যক্তির নাম বলেন। পরে ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে পুলিশ বিপুল পরিমাণ ধানবীজ ও সার উদ্ধার করে।’
বীজ ও সার উদ্ধারের বিষয়ে ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এই ধানবীজ ও সার সবাই এভাবে কৃষি অফিস থেকে নিয়ে যায়। এর ভাগ পান চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কতিপয় সাংবাদিকেরাও। কিন্তু একটি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তাঁরা আমার ধানবীজ আটকে দিয়েছেন।’
ইউএনওর কার্যালয়ে ভ্যানচালক মিঠু মিয়া ও শফিকুল ইসলাম জানান, এই সার ও ধানবীজ কৃষকের নয়। এগুলো কৃষি অফিস থেকে নেওয়ার জন্য আলমগীর পাঠিয়েছেন। ওই ভ্যান চালকদের কথা অনুযায়ী ইউএনও নাহিদ তামান্না বিষয়টি গঙ্গাচড়া থানা-পুলিশকে জানান। পরে সন্ধ্যায় গঙ্গাচড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মন্তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আলমগীরের গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তাঁর একটি ঘর থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় ১৫৩ বস্তা উফশী জাতের ধানবীজ ও এক বস্তা পাটবীজ উদ্ধার করেন। তবে অভিযানের খবরে আলম মিয়াসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, আলমগীর ওই ধান ও পাটবীজ খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, গঙ্গাচড়ার ধান, গম, ভুট্টা, সরিষার বীজসহ রাসায়নিক সার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকার সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নামমাত্র কৃষকদের প্রণোদনার এসব সার ও বীজ দিয়ে বিপুল পরিমাণের এসব বীজ ও সার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করেন। কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ওই দুই ভ্যানে সার ও ধান বীজ তুলে দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুরের সঙ্গে আজ রাত ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।