কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণে ধানের শিষ সাদা হয়ে গেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা। কখনো প্রচণ্ড গরম, আবার কখনো বৃষ্টি—এ ধরনের আবহাওয়ার কারণে ধানে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকেরা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে তাঁরা বৈরী আবহাওয়ার ফাঁদে পড়েছেন। রোপা আমন লাগানোর পর অনাবৃষ্টির কবলে পড়েন। খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ফসল বাঁচাতে কৃষকদের টানা সেচ দিতে হয়। এরপর দেখা দেয় বিভিন্ন রোগবালাই। রোগবালাই মুক্ত করতে জমিতে বালাইনাশক দেন কৃষকেরা। এখন দেখা দিয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক। ফলে ধানগাছ তাজা থাকলেও দানা বাঁধার আগেই শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে প্রচণ্ড রোদ আর গরমের পর কয়েক দিন ধরে উপজেলাজুড়ে নেমেছে বৃষ্টির ধারা। রাতে ও দিনে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো হালকা, কখনোবা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টিতে উঁচুনিচু প্রায় সব জমিতে পানি জমেছে।
ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক মজু ব্যাপারী বলেন, আমন আবাদের শুরু থেকে খরার ধকল যাচ্ছে। সেচপাম্প চালু করে জমিতে পানি দিতে হয়েছে। তাতে আবাদে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।
শাহবাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, খরার কারণে ধানখেতে খোল পচা, মাজরা ও ছত্রাক রোগের দেখা দেয়। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় খেতের রোগবালাই অনেকটা কমেছে।
ওই এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান রব্বানী বলেন, আর কয়েক দিন পর ধানের শিষ বের হবে। এ সময়ে জমিতে পানির খুবই প্রয়োজন।
নন্দীরকুটি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর তিন বিঘা জমির ধানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ধানগাছ ঠিক থাকলেও শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। দানা হচ্ছে না।
বিদ্যাবাগিস গ্রামের কৃষক শাহানুর প্রামাণিক জানান, তাঁর দুই বিঘা জমির ধানে পচন দেখা দিয়েছে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন না।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ধানখেতে ছত্রাক ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টিতে ধানখেতে পানি জমায় মাজরা, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাক রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমে আসবে। তবে কিছু কিছু খেতে ব্যাকটেরিয়ার কারণে পচন দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টিপ্রবণতা কমে গেলে আক্রান্ত খেতে অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টরে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দমনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো মেনে চললে কৃষকেরা ভালো ফলনও পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।