বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশে পরীক্ষিত দুটি দেশপ্রেমিক শক্তি আছে; এর একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াতে ইসলামী।’ গতকাল সোমবার রাতে রংপুরের পাগলাপীরে দলের এক পথসভায় এ কথা বলেন তিনি।
এদিকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশকে দখলবাজ চাঁদাবাজমুক্ত করতে নেতা-কর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন একটা দেশ গড়তে চাই; যে দেশে দখলবাজি চাঁদাবাজি চলবে না। দুর্বলেরা সবল দ্বারা অত্যাচারিত হবে না। শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবে। সমতা-সাম্য কায়েম হবে। শহীদেরা যে দেশ চেয়েছিলেন, তার বাস্তব নমুনা দেখাতে চাই।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘গত ১৫টা বছর গাইবান্ধা ছিল লাশ আর রক্তের জনপদ। আওয়ামী লীগ আগেই জানান দিয়েছিল যে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা কী করবে। সেটা জনগণ বুঝতে পারেনি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। এরপর পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার হত্যা করে দুটি বাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দেয়। সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হলেও তার রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি। পরের বছর জামায়াতকে ধরল। কারণ জামায়াতের লোকজনও দেশপ্রেমিক ছিল। এরপর ধরল হেফাজতকে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যখন দেশের জনগণ অবৈধ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোট দিতে যান না, তখন তারা জনগণের ওপর নির্যাতন করা শুরু করল। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা জনগণের দাবি নিয়ে মাঠে নামলেই তাদের তৈরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নির্যাতন শুরু করল। আমরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সাড়ে ১৫ বছরের হাসিনার সাজানো রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছি। আমাদের অনেক নেতা কর্মীর বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে। আমি নিজেও সাড়ে ১৫ বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি। প্রিয়জনের মৃত্যুতে জানাজায় গেলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে ছাত্ররা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। ছাত্রদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বীর সন্তান মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয়েছেন। আবু সাঈদরা বলেছিলেন, বুকের ভেতর উঠছে ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। আবু সাঈদের মতো ২ হাজার তরতাজা প্রাণ আর ৩০ হাজারের ওপরে পঙ্গু ও আহতরা আমাদের মুক্তি দিয়েছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিক বলেন, ‘তারা যত দিন থাকতে চায়, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা তো কোনো দলের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের অত্যাচার নির্যাতনকারী শাসকের হাত থেকে পুরো জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন। রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই। না শুকাতেই উনি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন দেশে ফেরার জন্য। দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কোনো খুনির ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না।’
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, সাবেক জেলা আমির ডা. আবদুর রহীম সরকার ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ। মঞ্চের পাশেই ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমির মো. আব্দুল করিম সরকার। জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পক্ষে মুহিদ আহমেদ ফাহিম, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়ারেছ, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু, নুরুন্নবী প্রধান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রুকনুজ্জামান, ফয়সাল কবির রানা, শহর শাখা আমির অধ্যাপক এ কে এম ফেরদৌস আলম, সদর উপজেলা আমির মাওলানা নূরুল ইসলাম মণ্ডল, পলাশবাড়ী উপজেলা আমির আবু বকর সিদ্দিক, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আমির আবুল হোসেন মাস্টার, সাদুল্যাপুর উপজেলা আমির এরশাদুল হক ইমন, ফুলছড়ি উপজেলা আমির মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সাঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা ইব্রাহীম হোসাইন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আমির অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম মঞ্জু। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হয়।
কর্মী সম্মেলন উদ্বোধন করেন পলাশবাড়ী উপজেলার জুলাই বিপ্লবে শহীদ আরিফুল ইসলামের বড় ভাই রাশিদুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী মন্দিরের পুরোহিত মিলন কুমার ভট্টাচার্য। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের জেলা আমির মুফতি আবদুল বাছেত ও সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুল হাসান কাসেমী।