নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
মৌলভীবাজারের বড়কাপন গ্রামে ১৪টি মহাবিপদাপন্ন শকুন ও অন্যান্য বন্য প্রাণী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রাণী অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার। আজ মঙ্গলবার টিলাগড় ইকোপার্কসংলগ্ন রাস্তায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাধিকার জানায়, ২৪ মার্চ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামের বুড়িকোনা খেতের মাঠে বিষপ্রয়োগে ১৪টি মহাবিপদাপন্ন শকুনসহ শিয়াল, কুকুর ও বিড়াল হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ট্রেনের (কালনী এক্সপ্রেস) ধাক্কায় আহত মায়াহরিণকে ট্রেন থামিয়ে জবাই করে ট্রেনটির সহকারী চালক ও কয়েকজন স্টাফ। এ দুটি ঘটনাসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী হত্যার বিচারের দাবিতেই প্রাধিকারের এই মানববন্ধন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন প্রাধিকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মেহেদী হাসান খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. অনিমেষ চন্দ্র রায়, প্রভাষক ডা. মাসুদ পারভেজ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, প্রাধিকারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা দুগ্ধ খামার সিলেটের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আবদুল মজিদ উজ্জ্বলসহ প্রাধিকারের সদস্যরা।
মানববন্ধনে প্রাধিকারের উপদেষ্টা সিকৃবির অধ্যাপক ডা. মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘শকুন, হায়না এসব প্রাণী আমাদের পরিবেশে পড়ে থাকা মৃত জীবজন্তু, পশুপাখি বা ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে রক্ষা করে। অথচ আমাদের সাহিত্যের ভাষায় শকুন, হায়েনা এসব প্রাণীকে খারাপ চোখে দেখা হয়। ‘শকুনের দৃষ্টি’, ‘শকুনের দল’ এভাবে বলা হয়। যখন একজন শিশু এগুলো পড়ে তখন তার ভেতরে শকুন, হায়েনা সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মে। এ ধরনের সাহিত্য পরিবর্তন করা দরকার।’
প্রাধিকারের উপদেষ্টা সিকৃবির প্রভাষক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের জীববৈচিত্র্যের প্রত্যেকটা প্রাণী একেকটা অনুষঙ্গ। এই অনুষঙ্গের কোনো একটি ছাড়া কিন্তু আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব না। সেই ক্ষেত্রে শকুন হত্যা, বন্য প্রাণীর ওপর আক্রমণ, বিভিন্ন সময় সাপ মারা হচ্ছে, হরিণ ধরে খেয়ে ফেলছে এই ধরনের মানসিকতার কারণে আমরা মানবিক গুণাবলি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এই জিনিসগুলো ফোকাস করা উচিত এবং যে ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হোক।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, ‘আগে প্রাণীর অধিকার নিয়ে কাজ করার কোনো সংগঠন ছিল না। প্রাধিকার গঠনের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। বন্য প্রাণীর জন্য বাংলাদেশ এখন কঠিন সময় পার করছে। এ দেশে বিপন্ন প্রাণী রক্ষা করা খুব কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে। এটি সমাধানে সবার সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা চাই প্রকৃতির পক্ষে, প্রাণীর অধিকারের পক্ষে প্রত্যেকটা মানুষ কথা বলুক।’
উল্লেখ্য, শকুন একটি মহাবিপদাপন্ন পাখি। বন বিভাগ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট (আইইউসিএনের) জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। মৌলভীবাজারে ১৪টি শকুনের মৃত্যুর পর এই সংখ্যা আরও কমে গেল।