মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
মৌলভীবাজারে গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলায় মানুষের বসতঘর ও চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের অভাবে অনেক গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদিকে বন্যার কারণে অনেকে কম দামেও গরু বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।
মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা এলেও অসহায় এই প্রাণীগুলোর জন্য সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, জেলার নদ-নদীর পানি কমায় ধীরের ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
বন্যাদুর্গত মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু নিয়ে। বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। অনেক বাড়িঘর পানির নিচে রয়েছে। এতে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। আবার অনেকেই উঁচু জায়গায় গবাদিপশু বেঁধে রেখেছে। কিন্তু এই প্রাণীগুলোর খাবারের খুব সংকট। কেউ কেউ গবাদিপশুকে ধানের গুঁড়া খাওয়াচ্ছে। আবার কেউ কিছু খাওয়াতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করে।
গবাদিপশুর মালিকেরা বলেন, ‘আমাদের অনেকেই সাহায্য করেছেন বা করবেন। কিন্তু চার দিন ধরে একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে গবাদিপশুগুলো। অনেক পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চরম গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সবকিছুই বন্যার পানির নিচে। খড় ছাড়া আর কিছুই খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। পানি কিছুটা কমেছে, তবে ঘাস ও গোখাদ্য পচে গেছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান বন্যায় এই খাতে প্রায় ৮৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ১১ হাজার ২১৮টি গরু, ২ হাজার ৯২১টি মহিষ, ৮ হাজার ৮৮টি ছাগল, ৫০০ ভেড়া, ৩৬ হাজার ৭৬৪টি মুরগি ও ২৪ হাজার ৩৪৫টি হাঁস বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে এই সংখ্যা লক্ষাধিক বলে বন্যাকবলিত মানুষেরা জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা পতনঊষার ইউনিয়নের মুজাম্মিল মিয়া বলেন, ‘বন্যায় গোটা এলাকা ডুবে গেছে। গরুর জন্য কোনো খাবার পাচ্ছি না। আমার আটটি গরু আছে, কিছু গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সরকার-বেসরকারিভাবে আমাদের খাদ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গরুগুলোর জন্য কেউই কিছু দেয়নি।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মৌলভীবাজার বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশাপাশি যাদের ঘরে গবাদিপশু আছে, তারা স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি সংকটে পড়েছে। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি গোখাদ্য বিতরণ করার জন্য। সাতটি উপজেলায় আমাদের ১৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।’