প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি মৌলভীবাজার। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কাছাকাছি থেকে যারা ঈদের ছুটি উপভোগ করতে চান তাদের জন্য এ জেলায় রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তবে বৃহত্তর সিলেটের চলমান বন্যায় মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা সিলেট এবং মৌলভীবাজারে একসঙ্গে ঘুরতে আসেন। কিন্তু বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব এবারের ঈদে মৌলভীবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার মূল কারণ। পাশাপাশি পর্যটকদের নজর কাড়ছে স্বপ্নের সেতু পদ্মাসেতু। দেশে বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকেরা এখন পদ্মা সেতুমুখী। যার সাময়িক প্রভাব অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটনশিল্প পড়েছে এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
আজ সোমবার জেলা সদরের মনু ব্যারেজ, বর্ষিজোড়া ইকোপার্কসহ ছোট বড় পাহাড় টিলা ঘুরে দেখা যায়, গত ঈদুল ফিতরে মৌলভীবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও এবারের ঈদুল আজহায় পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। অন্য বছরের তুলনায় জেলার এবার প্রতিটি হোটেল-রিসোর্ট খালি রয়েছে।
এ বিষয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরগুলোতে ঈদের কয়েক দিন দিন আগে থেকে হোটেলে বুকিং শুরু হয়ে যেত। কিন্তু এবার তেমনটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যার ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে জেলার পর্যটন খাত। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদের ছুটিতে পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার পর গত ঈদুল ফিতরে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। জেলার পর্যটন স্পটগুলো ঈদুল আজহার ছুটিতেও পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর হোটেলে আশানুরূপ বুকিং হয়নি। তাই পর্যটক আগমনে শঙ্কায় রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটন সমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, গভীরে অরণ্যের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার হামহাম জলপ্রপাত, সারি সারি চা বাগান, জলপদ্ম-শাপলার সমন্বয়ে নয়নাভিরাম বিভিন্ন লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি।
এ ছাড়া রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড, আছে মাছ-পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কাবিল, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি, গগন টিলা, রাজনগরের জলের গ্রাম অন্তেহরী, কমলারানীর দিঘি, মাথিউরা চা ও রাবার বাগান, শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা, চা গবেষণা কেন্দ্র, ৭১ বধ্যভূমি, সদরের মনু ব্যারেজ, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক এবং ছোট বড় পাহাড় টিলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখা যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মণিপুরী পাড়া এবং বিভিন্ন চা বাগান ও বাইক্কাবিলসহ হাকালুকি হাওরে। এই পর্যটকদের ৯০ শতাংশ থাকার জন্য বেছে নেন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হোটেল রিসোর্টকে। কিন্তু এবার পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল গ্রিনলিফ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী এস কে দাস সুমন জানান, সিলেটের বন্যার কারণে মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতে ব্যাপক ধ্বস নেমেছে। পর্যটকেরা মনে করছেন, পুরো সিলেট বিভাগ বন্যা আক্রান্ত। তাই এবার মৌলভীবাজারেও পর্যটক আসতে চাচ্ছে না।