সুরমা নদীর পানি আজ রোববার সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ও সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে কানাইঘাটের নিম্নাঞ্চল কিছুটা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অব্যাহত অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত বছরের মতো এবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে।
কানাইঘাট পয়েন্টে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। তবে আজ ভোর ৬টায় পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যায়। কিন্তু সকাল ৯টার পর থেকে পানি আবারও বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা থেকে ফের সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছিল ১২ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। আজ ভোর ৬টায় তা নেমে ১২ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার হয়। আবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বেড়ে ১২ দশমিক ৮৬ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিলেটের অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে গতকাল ৯ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সেখানে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ৯ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গতকাল ছিল ১১ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। আজ সন্ধ্যা ৬টায় নদীর ওই পয়েন্টে ১১ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার সেখানে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল ৭ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার দিয়ে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় নদীর ওই পয়েন্টে ৮ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সারি নদীর সারীঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। সেখানে আজ সন্ধ্যা ৬টায় ১১ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধলাই নদের ইসলামপুর পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
পাউবোর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছিল। এখন স্থিতিশীল রয়েছে। বৃষ্টি না হলে কমে যাবে। বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।’
সুনামগঞ্জ
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জবাসীর মধ্যে। তবে চলতি বছর হাওরে বিলম্বে পানি আসার কারণে বর্তমানে পাহাড়ি ঢলের পানি জেলার ছোটবড় ৫২টি হাওরে প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। অন্য হাওরের দিকে ধীরে ধীরে ঢলের পানি প্রবেশ করছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘গতকাল বেলা ৩টা থেকে আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়।
দ্রুত পানি বাড়ায় মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। ২০২২ সালে এভাবেই অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পুরো জেলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। সেই শঙ্কা থেকে এখন নদ-নদীর পানি বাড়া দেখে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের সীমান্ত নদী ধোপাজান তীরের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে যেভাবে পানি বাড়ছে। এই পানি বাড়া দেখে আমার গত বছরের কথা মনে হচ্ছে, খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের ময়না মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে পানি বাড়তাছে পুরো হাওরে উত্তাল ঢেউ। এই ঢেউয়ে বসতভিটার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।’ লালপুর গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘পানি প্রতিদিন বাড়ছে। পানি বাড়লেই ২০২২ সালের বন্যার কথা মনে হয়ে যায়। বর্তমানে যেভাবে পানি বাড়ছে এভাবে বাড়তে থাকলে দুদিনের মধ্যেই ঘরে পানি চলে আসবে।’