সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে দাম্পত্য কলহের জেরে মিষ্টির সঙ্গে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে তিন সন্তানকে খাইয়ে নিজেও খেয়েছেন গৃহবধূ। পরে জানতে পেরে স্বজনেরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিন শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে ওই গৃহবধূ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ রোববার সকালে উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস।
নিহত শিশুরা হলো—৫ বছর বয়সী শাহেদ, ১২ বছরের তামজীদ ও ১৪ বছরে সাকিবা। তারা শান্তিপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ও যমুনা বেগম দম্পতির সন্তান। যমুনা বেগম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জাহাঙ্গীর হোসেন পেশায় একজন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী।
এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ ও স্বজনেরা বলছে, সকাল ১০টার দিকে মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর স্ত্রী যমুনা বেগমের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে যমুনা বেগম মিষ্টির সঙ্গে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে তিন সন্তানকে খাওয়ান এবং নিজেও খেয়ে ফেলেন। শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হলে সন্তানেরা চিৎকার শুরু করে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে তাদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তিন শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। যমুনার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গৃহবধূ যমুনা বেগমের ভাই মো. মমিন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার দুলাভাই জাহাঙ্গীর জুয়া খেলত। আমার বোন সেটাতে বাধা দিলে সব সময় তার ওপর অত্যাচার করত। সপ্তাহখানেক আগেও আমার বোনকে মারধর কইরা হাত–পা ভাঙছে। পরে আমরা গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে সালিস করে বিষয়টি মীমাংসা করে, বোনরে আবারও তাঁর বাড়িতে পাঠাই। আজকে আবারও জুয়া খেলার জন্য জমানো টাকা নিতে গেলে বোনের সঙ্গে ঝগড়া লাগে। এরপরই আমার বোন নিজেও বিষ খাইছে, বাচ্চাদেরও খাওয়াইছে।’
জাহাঙ্গীরের ভাই মো. সবুজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত রাতে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুনছি। পরে আমরা হাওরে মাছ ধরতে যাই। সকালে এসে দেখি আবারও ঝগড়া। পরে শুনি বাচ্চারা বিষ খাইছে। আমরা বাচ্চাসহ ওদের মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
এ বিষয়ে জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে ঝগড়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে যমুনা নিজেই তিন সন্তানসহ মিষ্টির সঙ্গে মিশিয়ে বিষ পান করেন। পরে তিন সন্তানের মৃত্যু হয় এবং তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।’
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।