হোম > সারা দেশ > সিলেট

৩ মাস বেতন বন্ধ ৪ চা-বাগানে, মানবেতর জীবনযাপন শ্রমিকদের

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ 

হবিগঞ্জের চন্ডিছড়া চা বাগান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেতন-রেশন বন্ধ তিন মাস। কেউ অনাহারে, কেউ অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে দিন পার করছেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) হবিগঞ্জের চণ্ডীছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা-বাগানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। বেতন না পেয়ে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করায় এসব বাগানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকানাধীন একসময়ের লাভজনক এনটিসির ১২টি চা-বাগান তীব্র অর্থসংকটে রয়েছে। চায়ের উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থসংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা মালিক ও শ্রমিকদের।

বাগান সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এনটিসির চেয়ারম্যান ও সাত পরিচালক একযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এতে আটকে যায় ব্যাংক ঋণ। ফলে অর্থসংকটে পড়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন। কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ কবির আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন। পরিষদের সাতজন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে লস্করপুর ভ্যালির মূল চারটি বাগানসহ সাতটি চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মরতদের বেতন-রেশন আটকে যায়। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে কোম্পানির আওতায় থাকা অন্য বাগানগুলোতে।

সরেজমিনে জানা গেছে, চণ্ডীছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা-বাগানের সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ হয় ২২ আগস্ট থেকে। পরে শ্রমিকেরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কোনো সমাধান না পেয়ে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকেরা। এরপর থেকে থমকে গেছে বাগানের উৎপাদন। অন্যদিকে নষ্ট হতে শুরু করেছে বাগানে মজুত থাকা ১০ লাখ কেজি তৈরি চা-পাতা। প্রতিটি বাগানে দিনে ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি নতুন কুঁড়ি ও কাঁচা পাতা উত্তোলন করা হয়। শ্রমিক না থাকায় এসব কুঁড়ি ও কচি পাতা নষ্ট হচ্ছে গাছেই। এতে চলমান সংকটের পাশাপাশি উৎপাদনে ধসের কারণে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা।

তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের শ্রমিক সুরঞ্জিত পাশি, হীরেন্দ্র ব্যানার্জি, বনীতা তাঁতী, শ্রীমতি অধিকারী, গোপেশ প্রাণ তাঁতী ও গায়েত্রী তাঁতী বলেন, ‘আমাদের তিন মাস ধরে বেতন ও রেশন বন্ধ। যাঁরা বাইরের কাজ করতে পারেন, তাঁরা কোনোভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যাঁরা বাইরে কাজ করতে পারি না, কষ্টে দিন যাপন করছি। এক কেজি চাল এনে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। আমাদের কথা কেউ শোনে না।’

তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি খোকন তাতি বলেন, বেতন ছাড়া প্রায় চার সপ্তাহ শ্রমিকেরা কাজ করেছেন। এরপর বেতন না পেয়ে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। অনেকে খেয়ে না-খেয়ে দিন যাপন করছেন।

গত আগস্টের ১৫ তারিখ থেকে বেতন বন্ধ আছে বলে জানান চণ্ডীছড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার। তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ায় অনেক শ্রমিকের পরিবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছে। পাঁচ সপ্তাহ বেতন না পাওয়ার পরেও আমরা কাজ করেছি। পরে এনটিসির হবিগঞ্জে চারটিসহ ১২টি বাগানে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন শ্রমিকেরা। প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি চলছে।

কেন্দ্রীয় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বাগানগুলো। এ ক্ষেত্রে এত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে মালিকপক্ষ এই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চণ্ডীছড়া চা-বাগানের জেনারেল ম্যানেজার সেলিমুর রহমান বলেন, ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মতো হবে বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে এক মাস হবে। এই সময়ের মধ্যে চা-গাছের পাতাগুলো বড় হয়ে গেছে। বাগানের অনেক পরিমাণে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

গত বছরও রেকর্ড গড়ে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায় বন্ধ থাকা চা-বাগানগুলোতে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। তবে উৎপাদনে ভাটা পাড়ায় এবার লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

সিলেটে বিপুল পরিমাণে চোরাচালানের মালামাল জব্দ

সিলেটে ৪০০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ ট্রাকচালক আটক

দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২ ভারতীয় নাগরিক আটক

‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে মামলা-বাণিজ্য

কমলগঞ্জে পাহাড়ি ছড়ায় যুবকের লাশ, শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন

পা পড়ে না চার সেতুতে

এক মাসেও মাটি পড়েনি ফসল রক্ষা বাঁধে

শতাধিক পণ্যে ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর প্রতিবাদে সিলেটে মশাল মিছিল

হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী কেউ যেন আমাদের মাথার ওপর না বসে: ফুলতলীর পীর

গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসবে মানুষের ঢল

সেকশন