হোম > সারা দেশ > হবিগঞ্জ

সৌদি দূতাবাসের কথা বলে ২৫ নারীকে ভোটার হালনাগাদ কেন্দ্রে নিল প্রতারক চক্র

ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 

সৌদি আরবে যেতে বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। গতকাল শনিবার ছিল আঙুলের ছাপ দেওয়ার শেষ দিন। তাই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ জন নারীকে আঙুলের ছাপ দিতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি ফরম পূরণের পর অধিকাংশ নারী আঙুলের ছাপ দেন। স্থানীয় কয়েকজনের সন্দেহ হলে পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে প্রতারকদের আটক করে।

জানা গেছে, এভাবে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতে সৌদি যেতে আগ্রহী নারীদের কাছ থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

গতকাল বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এ প্রতারণা চলতে থাকে। পরে খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অপারেটরসহ তিনজনকে আটক করেছে। সেই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের আঙুলের ছাপ গ্রহণ পরবর্তী নতুন ভোটার হওয়ার ৬৫টি স্লিপসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় পরিচয়পত্র। 

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন— নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার জমশেদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩৫), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী (২৮)। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা আজকের পত্রিকাকে জানান, গত বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) থেকে নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে চলছিল নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। গতকাল ছিল হালনাগাদের শেষ দিন। অন্যান্য দিনের মতো নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা ও জন্ম নিবন্ধন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেন ওই ইউনিয়নের নতুন ভোটারেরা। পরে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। এ সময় কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ মিয়া নতুন ভোটারের ফরমে ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নম্বরের তথ্য খালি রেখে সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী নামে এক নারীর আঙুলের ছাপ নেন। এরপর নেত্রকোনার ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। কারণ এই দুই নারী ছিলেন তাঁদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। এ সময় আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরীসহ তিন নারীকে আটক করা হয়। সেখান থেকে মোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি ২২ জন নারীসহ পালিয়ে যান। 

খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমশেদ মিয়া, আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

ভুক্তভোগী সুলতানা আক্তার সুমী এসেছিলেন সুনামগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, ‘আমি তিন বছর সৌদি আরবে ছিলাম। এক বছর আগে দেশে এসেছি। আবার আমাকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে এপ্রিল মাসে আবু সুফিয়ান নামে এক দালাল ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেয়। সৌদি যেতে হলে অ্যাম্বাসিতে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। তাই সুফিয়ান তাঁর সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক আমিসহ দুটি মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি আঙুলের ছাপও দিয়েছি। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন নারীকে আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য সৌদি অ্যাম্বাসিতে নেওয়ার কথা বলে এখানে আনা হয়েছে।’

নেত্রকোনার ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। সৌদি আরবে নেওয়ার নাম করে সুফিয়ান নামে এক দালাল আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। গতকাল শনিবার সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ দেওয়ার শেষদিন, এমন কথা বলে চট্টগ্রাম থেকে এখানে আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। ঝামেলার জন্য আমি আঙুলের ছাপ দিইনি।’ 

রিমা বেগম বলেন, ‘সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমিসহ ২৫ জন মহিলা সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে কয়েক লাখ টাকা সুফিয়ান এবং তাঁর সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর কাছে দিয়েছি। শনিবার আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা গ্রামের মানুষ, আমরা তো আর বুঝিনি যে বিদেশের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে এনে এখানে আমাদের নতুন ভোটার বানাচ্ছে।’ 

আজিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, তিন দিন ধরে নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। শনিবার শেষ দিনে অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদের বাউসা ইউনিয়নের ভোটার করার জন্য নিয়ে আসা হলে ধরা পড়ে যায়। বাইরের জেলার কতজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে বাউসা ইউনিয়নের নতুন ভোটার হিসেবে সার্ভারে তথ্য গেছে তা এখন কীভাবে নির্ণয় করবে নির্বাচন কমিশন? এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। 

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করায় কয়েকজন দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আমার ইউনিয়নে নিয়ে আসা হয়। আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ অপরিচিত দেখে তাদের আটক করেন।’ 

এ বিষয়ে নবীগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে অন্যান্য উপজেলার লোকদের নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নের ভোটার করার জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে—এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সত্যতা পেয়েছি। বাউসা কেন্দ্রের টিম লিডার মতিউর রহমান বাদী হয়ে আটককৃত দালাল চক্র ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘যারা আজকে ভোটার হয়েছে তাদের তথ্য অফলাইনে রয়েছে। উদ্ধার হওয়া স্লিপের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী তথ্য যাচাই-বাছাই করে এগুলো বাদ দেওয়া হবে। দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমেদ বলেন, ‘সৌদি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বাসিতে আঙুলের ছাপ দেওয়ার নাম করে একটি চক্র বিভিন্ন জেলা থেকে মহিলাদের বাউসা ইউনিয়ন অফিস নিয়ে আসে। সেখানে চলমান নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত করে। এখানে নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়েই অন্যান্য জেলার মহিলাদের আঙুলের ছাপ নেন। এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটরসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া প্রক্রিয়াধীন।’ 

জৈন্তাপুরে সাড়ে ১৬ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ, নিলামে বিক্রি

মৌলভীবাজারে আ.লীগের ৯ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

সিলেট সীমান্তে খাসিয়াদের গুলিতে ২ জন নিহত

সিলেটে প্রথম আলো অফিসের সাইনবোর্ড, গ্লাস ভাঙচুর

কোন্দলই বিএনপির বড় সংকট

সিলেটে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তিন

হত্যা মামলায় বিয়ানীবাজার পৌর আ. লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

সিলেটে যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না বুধবার

চবি উপ-উপাচার্যের পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই: নাছির উদ্দীন

শাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের ২২ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা, নারী প্রার্থী একজন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদ ফাঁকা