প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৫ বছর বয়সী সমরা মুন্ডা। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর তলপেটে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পান। এরপর অস্ত্রোপচার করে দেখা যায়, সমরা মুন্ডার পেটের ভেতর প্রায় ২৫ ইঞ্চি লম্বা একটি জীবন্ত কুঁচিয়া নড়াচড়া করছে। এরপর সেটি সফলভাবে বের করে আনা হয়।
গতকাল রোববার সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার করা হয়। সমরা মুন্ডা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর মির্তিঙ্গা চা-বাগান এলাকার ধন মুন্ডার ছেলে। সমরা মুন্ডা পেশায় জেলে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জীবন্ত কুঁচিয়া সমরা মুন্ডার পেটের ভেতরে ছিদ্র করে ফেলেছিল। যে কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিলেন রোগী। এ ধরনের ঘটনা বিরল ও অবিশ্বাস্য!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার নিজ এলাকায় হাওরে মাছ ধরতে যান সমরা মুন্ডা। দুই হাতে দুটি কুঁচিয়া থাকা অবস্থায় তিনি কাদামাটিতে আটকে পড়েন। এ সময় হাতে থাকা একটি কুঁচিয়া তাঁর প্যান্টের ভেতরে ঢুকে যায়। আরেকটি কাদায় পড়ে যায়। তখন তিনি অনুভব করেন তাঁর পায়ুপথে কিছু একটা ঢুকছে। তবে গুরুত্ব না দিয়ে বাড়ি চলে যান। রাতে খাওয়া–দাওয়ার পর পেটে ব্যথা অনুভব করেন। একপর্যায়ে পেটব্যথা প্রকট আকার ধারণ করলে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানেও কোনো সমাধান না হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অস্ত্রোপচারে অংশ নেন হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-২-এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রাশেদুল ইসলাম ও ডা. তৌফিক আজিজ শাকুর।
এ অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তির পর প্যান্টের ভেতর কুঁচিয়া ঢোকার বিষয়টি জানান। কিন্তু পায়ুপথ দিয়ে এটা ঢুকে গেছে বলে নিশ্চিত ছিলেন না। পরে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। পরে ২৫ ইঞ্চির মতো লম্বা কুঁচিয়া পেট থেকে জীবন্ত অবস্থায় বের করা হয়। এটি পেটের ভেতরে বৃহদান্ত্রে ৫ ইঞ্চি ছিদ্র করে ফেলে। ফলে পায়খানা পুরো পেটে ছড়িয়ে যায়। আমরা ওয়াশ করে দিয়েছি। হাই পাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক চলছে। ইনফেকশন বা ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, অস্ত্রোপচারটি খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বর্তমানে রোগী সুস্থ আছেন। তিনি কথাবার্তাও বলছেন।
ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন বলেন, ‘কুঁচিয়ার মুখ চোখা থাকায় এটি পেটের মধ্যে ছিদ্র করে ফেলে। বিশেষ করে তলপেটে একটি ছিদ্র করায় রোগীকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। তবে চিকিৎসকেরা দ্রুত অস্ত্রোপচার করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।’ বিরল এ অস্ত্রোপচার সফল করায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান তিনি।