হোম > সারা দেশ > সিলেট

সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কাজ না করেই ১৫ কোটি টাকা ঠিকাদারের পকেটে

রাহুল শর্মা, ঢাকা 

বীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বীরমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ের পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরের দ্বারপ্রান্তে এসেও তা শেষ হয়নি। অথচ বিলের সিংহভাগ টাকাই তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সিলেট জেলা কার্যালয়ে।

শুধু বীরমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয় নয়, সিলেট জেলার অন্তত ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ অগ্রিম বিল দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। টাকার অঙ্কে যা ১৫ কোটি টাকার বেশি। আর এসব ঘটনা ঘটেছে ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে। ইইডির সিলেট জেলা অফিসের নথিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আসবাব সরবরাহ করে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ ও আইসিটি সুবিধা দেওয়ার কাজও করে থাকে এ অধিদপ্তর।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেট জেলায় গত ৫ বছরে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগের কাজই নিম্নমানের হয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে গত ৫ বছরে সিলেট জেলায় ইইডি বাস্তবায়িত/বাস্তবায়নাধীন কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। অনেক দিন আগে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও অধিকাংশ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি আমি এখনো দেখিনি। আমার নির্দেশনা রয়েছে যেখানেই অনিয়ম হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার।...এসব অনিয়ম রোধে আমরা কিছুটা পদক্ষেপ নেব। কিছু ক্ষেত্রে দুনীতি দমন কমিশনের সহযোগিতা নেব।’

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বীরমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কুশিয়ারা ট্রেডিং। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। অথচ কুশিয়ারা ট্রেডিংকে বিল বাবদ ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের হিসাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মাণকাজের মান সন্তোষজনক নয় বলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারি কাজে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেওয়ার বিধান নেই। কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী বিল দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে অঙ্কের অর্থের কাজ শেষ হয়, সে অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সিলেট জেলায় নির্মাণকাজের বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনই মানা হয়নি। সেখানকার ইইডিতে এটি সবার জানা বিষয়।

অগ্রিম বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী প্রকৌশলী বলেন, জেলার কমপক্ষে ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজে ১৫ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনই মানা হয়নি। অগ্রিম বিলের পুরো টাকাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যোগসাজশে ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছেন। অগ্রিম বিলের পরিমাণ ছিল আরও বেশি। গত দেড় বছরে কাজ করিয়ে এর মাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বেশির ভাগ ঠিকাদার পলাতক।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলা ওই সহকারী প্রকৌশলী জানান, বেশির ভাগ অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় একাধিক তদন্তও করেছে। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘অদৃশ্য কারণে’ তখনকার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল হাকিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে ২০২৩ সালের জুলাইতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ময়মনসিংহ সার্কেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট জেলার বেশ কয়েকটি কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এগুলো আমার দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগের। অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে, বিভাগীয়ভাবেও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিধিমোতাবেক মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’

ইইডি সিলেট অফিস সূত্র বলছে, ইইডির সিলেট জেলা কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজে ‘অবৈধ সুবিধার’ বিনিময়ে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই তালিকায় আছে রসময় উচ্চবিদ্যালয়, আতাহারিয়া উচ্চবিদ্যালয়, মুলাগুল হারিছ চৌধুরী একাডেমি, লালাবাজার আলিম মাদ্রাসা, শাহজালাল বাজার উচ্চবিদ্যালয়, আবদুর রাজ্জাক স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়, গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ ইত্যাদি।

সূত্র আরও বলছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগের কাজ চলছে ঢিমেতালে। কোনো কোনোটির কাজ পুরোপুরি বন্ধ। কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বেশির ভাগ ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এ নিয়ে জানতে চাইলে ইইডির সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে কাজে যোগ দিয়েছি। এসব কাজ হয়েছে ২০২২-২৩ সালে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

অগ্রিম বিল পরিশোধের সময় ইইডির সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন মো. নজরুল হাকিম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো তো কাজ শেষ হয়নি। কিছু অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সব রিকভার হয়ে গিয়েছে।’

জৈন্তাপুরে সাড়ে ১৬ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ, নিলামে বিক্রি

মৌলভীবাজারে আ.লীগের ৯ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

সিলেট সীমান্তে খাসিয়াদের গুলিতে ২ জন নিহত

সিলেটে প্রথম আলো অফিসের সাইনবোর্ড, গ্লাস ভাঙচুর

কোন্দলই বিএনপির বড় সংকট

সিলেটে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তিন

হত্যা মামলায় বিয়ানীবাজার পৌর আ. লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

সিলেটে যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না বুধবার

চবি উপ-উপাচার্যের পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই: নাছির উদ্দীন

শাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের ২২ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা, নারী প্রার্থী একজন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদ ফাঁকা