আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে লুকোচুরির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। শর্ত মানার ধারাবাহিকতায় আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরাতে খেলাপি ঋণের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খেলাপি রাতারাতি কমানো যায় না বলে আইএমএফকে খেলাপি কম দেখাতে লুকোচুরি করছে ব্যাংকগুলো। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তাকে পুঁজি করার অভিযোগ রয়েছে। নতুন নিয়মে দুই বছরের বেশি খেলাপি— এমন ৪৪ হাজার কোটি টাকা অবলোপনের সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি খেলাপিযোগ্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে পুনঃ তফসিলও করা হয়েছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ আইএমএফকে দেওয়া খেলাপি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৬১টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশ। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর ৩ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের খেলাপি ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি, যা মোট খেলাপির প্রায় ২২ শতাংশ। পাশাপাশি মোট অবলোপন করা বকেয়ার পরিমাণ ৬৬ হাজার কোটি থেকে দুই বছর ধরে চলমান বকেয়া প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার গত বছরের ৯ মাসে খেলাপিযোগ্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। ফলে গত সেপ্টেম্বর শেষে পুনঃ তফসিল করা ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। এই নতুন পুনঃ তফসিল ও অবলোপন করা বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর অর্থঋণ আদালতের মামলায় আটকা অর্থ ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে আটকা রয়েছে ১১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সব মিলে অর্থঋণ আদালতসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৪২ হাজার মামলায় ঝুলে রয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর অবলোপন করা ঋণের প্রায় ৪৪ হাজার কোটি এবং নতুন করে পুনঃ তফসিলের ১৯ হাজার কোটি টাকা আইএমএফকে দেওয়া তথ্য থেকে বাদ দেওয়া হবে।
এদিকে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) বিতরণ করা ঋণ ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। খেলাপি ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পুনঃ তফসিল ও অবলোপন সুদ মওকুফ এটা খারাপ সংস্কৃতি। এ অবস্থায় খেলাপি কমবে কিন্তু ব্যাংকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে না। এখানে লুকোচুরি করা উচিত নয়। যা ঘটে, তা-ই প্রকাশ করতে হবে। তাতে নীতিমালা কার্যকর হচ্ছে না, তা বোঝা যাবে।