শাহীন রহমান, পাবনা
ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যায়ে রয়েছে পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দরের নির্মাণকাজ। যদিও মাঝখানে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে দুবার। তবে এরই মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে গতি বাড়বে অন্তত ১০ গুণ। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।
প্রকল্প সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ীতে একটি আধুনিক নদীবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এই অঞ্চলে কম খরচে সহজে নদীপথে বিপুল পরিমাণ সার, কয়লা, সিমেন্ট, পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আনা-নেওয়া হয় নগরবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে। ২০১৮ সালে ৫৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ৩৬ একর জায়গার ওপর যমুনা নদীর পাড়ে শুরু হয় নগরবাড়ী নৌবন্দর নির্মাণকাজ। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা জটিলতা থাকায় মেয়াদ বাড়ানো হয় দুবার। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ।
একসময় বন্দরের জায়গার স্বল্পতার কারণে নদীর পাড়েই জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হতো। বন্দরের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হলেও সিংহভাগ শেষ হওয়ায় বন্দরটিতে এরই মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। স্থানীয়দের আশা, এই নদীবন্দরের কাজ শতভাগ শেষ হলে কমবে খরচ, বাড়বে কর্মসংস্থান। সম্প্রতি বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হচ্ছে, অন্যদিকে নির্মাণকাজও এগিয়ে চলেছে সমানতালে। শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখর নদীবন্দর। শ্রমিকেরা বিভিন্ন জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে ট্রাকে ভরছেন; আবার জাহাজ থেকে পণ্য মেশিনের সাহায্যে ট্রাকে ভরা হচ্ছে।
নগরবাড়ী থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে থাকা ট্রাকচালক মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরটা নির্মাণ শেষ হলে পণ্য আনা-নেওয়ায় গাড়ি চলাচল বাড়বে, আমাদের কাজ ও আয় বাড়বে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে নদীবন্দরের নির্মাণকাজ চলছে, কিন্তু শেষ হয়েও যেন হচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রুত শেষ হোক। সরকার এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ালে অনেক উপকার হবে।’
এদিকে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার আশ্বাস মিলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এস রহমান গ্রুপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বদরুল আমিন বলেন, ‘দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কাজ। এর আগে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দুবার সময় বাড়ানো হয়েছিল। আশা করি, সময় বাড়ানোর আর প্রয়োজন হবে না। ২০২৫ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
নগরবাড়ী নদীবন্দরের বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘আধুনিক নৌবন্দরের মতো পণ্য খালাসে এখানেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। এতে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বাড়বে কয়েক গুণ। বর্তমানে প্রতিদিন মালপত্র খালাস করা যাচ্ছে দুই হাজার টন, বন্দরের কাজ শেষ হলে পণ্য খালাস করা যাবে অন্তত ২০ হাজার টন; পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।’