বিদেশি ফসল হলেও দেশে অনেক চাহিদা রয়েছে কফি ও কাজুবাদামের। চাহিদার বড় অংশই পূরণ করতে হয় আমদানি করে। তবে এখন দেশের মাটিতে কফি ও কাজুবাদাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প পরিসরে কফি ও কাজুবাদামের চাষ হতো, এখন চাষ হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। এবার পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও দেশের সমতল এলাকার কিছু জেলায় এই ফসল দুটোর চাষ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
দেশে কফি ও কাজুবাদাম চাষ জনপ্রিয় করতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’ হাতে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ২১১ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার ২৫টি উপজেলাসহ অন্যান্য উপযোগী এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বাড়ানো। একই সঙ্গে কৃষি পণ্য দুটি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা।
কয়েক বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের লামা, আলিকদমসহ পাঁচটি উপজেলার চাষিদের থেকে কফি ফল কেনেন তৈদুরাম ত্রিপুরা। এই ফল প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। তৈদুরাম ত্রিপুরা বলেন, গত বছর তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির পক্ষে এক মেট্রিকটন কফি ফল কিনেছিলেন। তবে এ বছর নভেম্বরের মধ্যেই তিন মেট্রিকটন কফি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। তৈদুরাম বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে পাহাড়ে প্রতি বছর কফি চাষের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন দুটোই বাড়ছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে এক শ একর জমিতে কফি ও কাজুবাদাম চাষ করেছেন ওয়াজেদুল ইসলাম মবিন। ২০২০ সালে প্রথমে নিজ উদ্যোগে বাগান শুরু করলেও পরে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ফসল দুটোর চারা পেয়েছেন। এখন বাগানে কিছু গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়েছে। ৪০ একর জমিতে কাজু বাদামের চারা লাগিয়েছেন রাঙামাটির চাষি আসাদুল্লাহ হিল গালিব। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কিছু ফলও পেয়েছেন। তিনি আশা করেন দুই তিন বছর পরে পুরোপুরি ভালো ফলন পাবেন।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে কাজুবাদামের বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। প্রতি বছর গড়ে ২৫০০-৩০০০ টন প্রক্রিয়াজাতকৃত কাজুবাদাম আমদানি হয়। দেশে কফির চাহিদা প্রায় ২০০০ টন। গত এক দশকে গড়ে কফির চাহিদার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫৬ শতাংশ। বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কফি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হয়। ভোক্তা পর্যায়ে গত ৫ বছরে এ দুটি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় কফি ও কাজুবাদাম চাষের উপযোগিতা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় ডিএই’র মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপযোগিতা অনুসারে কাজুবাদাম ও কফি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ডিপিপি সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পে নতুন করে নীলফামারী, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় জেলার উপযোগিতা যাচাই করে প্রকল্প এলাকা বাড়ানো হবে।
জানতে চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কফি ও কাজুবাদাম দুটোর আন্তর্জাতিক চাহিদা অনেক বেশি। বাংলাদেশেও মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদা বেড়েছে। দেশে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন শুরু হলেও, এখনো অনেকাংশে আমদানি নির্ভর। এই ফসল দুটির উৎপাদন বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দেশে কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন আরও বাড়লে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।’