জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আসন্ন মুদ্রানীতির জন্য সুদের হার নির্ধারণে রীতিমতো ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার সুদহার বাজারভিত্তিকের পরেও কাজ না করায় অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি টাকার সরবরাহ কমিয়েও মূল্যস্ফীতির লাগামও টানা যাচ্ছে না। ডলার ব্যবস্থাপনায় হাবুডুবু দশায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটি ভুলনীতির দায় এড়াতে সিন্ডিকেট, জ্বালানির চড়া দাম এবং বিশ্ববাজারের দোহাই দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণের ভিত্তি ধরা হয় নীতি সুদহার। গত জুলাই মাসে ব্যাংকের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ৮ এপ্রিল বাজারভিত্তিক সুদহারের কারণে কোনো কোনো ব্যাংকের সুদের হার ১৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়।
তাহলে এক বছরে সুদের হার বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা প্রায় ১০ শতাংশ। অপর দিকে গত অর্থবছরের জুলাইতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা ছিল। যদিও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষে জুনে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা গত ১৩ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
সূত্র জানায়, ১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ১৬ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় পাস হবে। তার আগে ১৪ তারিখে মুদ্রানীতি ঘোষণাসংক্রান্ত মূল কমিটি সভা করবে আর আগামী বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে। তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নরের মতামত নিয়ে সুদের হার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে নীতিতে দুর্বলতা আছে। শুধু সংকোচন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হয় না। আরেকটি বিষয় হলো বাজারে জিনিসপত্র আছে। কিন্তু বাজার মনিটরিং হচ্ছে না।
গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২য় ষাণ্মাসিকের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত মতে, নীতি সুদহার ৭.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে টাকার সরবরাহ কমানোর কথা ছিল। এতে কিছুটা নগদ টাকা কমে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি না কমে উল্টো বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সব টুলসই ব্যবহার করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আসতে পারেনি। এমনকি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঘোষিত লক্ষ্যের ২ শতাংশ বেশি বা কম হওয়ার যে প্রবণতা, সেটা থেকেও অনেক দূরে। মূলত সুদের হার নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং টাকার সরবরাহ কমিয়ে পণ্যের দাম কমিয়ে আনার কোনো নীতিই কাজ করছে না। সিন্ডিকেট, ডলারের বিপরীতের টাকার অবমূল্যায়ন এবং বিশ্ববাজারের অনেক বিষয়ের সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একা মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে না।