বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মারা গেছেন। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ওয়াশিংটনের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ গণমাধ্যমকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নুরুল ইসলামের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
পাকিস্তান আমলে বাঙালি বৈষম্যের চিত্র সামনে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন শিক্ষক নুরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা প্রণয়নে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন নুরুল ইসলাম। স্বাধীনতার পরপরই দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু নতুন দেশ গঠনে সহযোগী হিসেবে বেছে নেন নুরুল ইসলামকে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশন। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে থেকে তার পরের পদে অর্থাৎ ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন নুরুল ইসলামকে। ওই কমিটিতে অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও রেহমান সোবহান সদস্য ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকোণ্ডের পর বিরূপ পরিস্থিতিতে বিদেশে পাড়ি জমান নুরুল ইসলাম। মৃত্যুর আগপর্যন্ত খাদ্য নীতিবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) ইমেরিটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে তিনি সংস্থাটির মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ নীতি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতি ও সামাজিক নীতি বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চেয়ারম্যান ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিজিটিং একাডেমিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইয়েল, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস । দেশে-বিদেশে ২৫টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে । প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘করাপশন’, ‘ইটস কন্ট্রোল অ্যান্ড ড্রাইভারস অব চেঞ্জ’ (২০১৬); ‘অ্যান ওডেসি : দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’ (আত্মজীবনী, ২০১৭) এবং ‘ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ : আ প্রাইমার অন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি’ (২০১৯)।