নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে সেতু নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের জন্য সুকুক বন্ড ছাড়বে সরকার। আগামী মার্চ মাসে এই বন্ড ইস্যু করে তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় সরকার। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ‘পল্লি এলাকার সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ নামের এই সুকুক বন্ডের অর্থ দিয়ে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুকুকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এই সুকুক বন্ডে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি ও বিমা প্রতিষ্ঠান ৭০ শতাংশ এবং কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক ব্রাঞ্চ ও উইন্ডোর অনুকূলে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। এ ছাড়া, ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুকুক বন্ড কিনতে পারবেন।
তবে এ তিন শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন না পাওয়া গেলে তাদের মধ্যে অবশিষ্ট সুকুক আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা তাঁদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এর বাইরে, প্রবাসী ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে কার্যরত যেকোনো ব্যাংকে তাঁর ও তাঁদের নামে পরিচালিত বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব অথবা টাকা হিসাবের মাধ্যমে সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই বন্ডের মুনাফা, বিক্রয়লব্ধ অর্থ ও মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্ত আসল বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
এর আগে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং খাতের তারল্যকে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড বা সুকুক চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ‘সুকুক’ শব্দটি প্রকৃতপক্ষে ‘সক্ক’ শব্দটির বহুবচন—এটি একধরনের আইনগত দলিল বা চুক্তি। সুকুকের প্রথম প্রচলন সপ্তম শতাব্দীতে, বর্তমান সিরিয়ার দামেস্কে।
সুকুক হলো কোনো সেবা, প্রকল্প, বিনিয়োগ কিংবা কোনো স্থাবর সম্পদ বা তা ভোগদখলের অধিকারের অবিভাজিত স্বত্বের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামসম্মত সনদ। অর্থাৎ সুকুক হচ্ছে কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ কিংবা কোনো সেবার আংশিক মালিকানা নির্দেশকারী দলিল।
প্রচলিত বন্ডের সঙ্গে সুকুকের মূল পার্থক্য হলো সুকুক কোনো সম্পদের ওপর স্বত্ব বা মালিকানার ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়। যার অর্থ, সুকুক কোনো ঋণ নয়, বরং একার্থে এটি আংশিক মালিকানা বা স্বত্ব। সুকুকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহভিত্তিক হওয়ায় এতে রিবা বা সুদ নেই। হয় শরিয়াহর বিধিবিধান সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করে সুকুক ইস্যু ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কেবল শতভাগ শরিয়াহসম্মত কোনো প্রকল্পেই ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক হওয়ায় সুকুকের মুনাফা কেবল বিনিয়োগ আয় থেকেই দেওয়া যাবে এবং এই মুনাফার হার পূর্বনির্ধারিত (ফিক্সড) নয়। কিন্তু প্রচলিত বন্ডের সুদ পূর্বনির্ধারিত—বন্ড থেকে উত্তোলিত অর্থ সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা নেই এবং তা কোনোভাবেই সম্পদের মালিকানাও নির্দেশ করে না।