সরকার এখন অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে এবং বিদেশি ঋণও প্রয়োজন মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে তামাক খাত হতে পারে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আয় বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিশেষ করে, সিগারেটের করকাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনলে, সরকার শুধু এ খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারে।
গতকাল, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্লানার্স টাওয়ারে আয়োজিত ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করেছে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। এতে অংশগ্রহণ করেছেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৫০ জন সাংবাদিক।
বক্তারা জানান, বর্তমানে সিগারেটে চারটি মূল্য স্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ, এবং প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর কাঠামো ঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম প্রায় সমান হওয়ায়, ভোক্তা সহজেই একটি স্তরের সিগারেট বেছে নিতে পারে। তাঁরা বলেন, আগামী বাজেটে সিগারেটের এই দুই স্তরকে একত্র করে দাম বাড়ালে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণদের মধ্যে ধূমপান কমাতে উৎসাহ দেওয়া যাবে, পাশাপাশি তামাক খাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা, এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরও সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সাধারণ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়েছে, যেমন চিনির ৮৯ শতাংশ, আলুর ৮৭ শতাংশ, আটা ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যের দামও যথেষ্ট বেড়েছে। অথচ সিগারেটের দাম মাত্র ৬-১৫ শতাংশ বেড়েছে, যা তরুণ ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে তামাক ব্যবহারে আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে, আগামী বাজেটে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেমন নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেট একত্র করে প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা এবং উচ্চ স্তরের সিগারেটের দাম ১৪০ ও প্রিমিয়াম স্তরের দাম ১৯০ টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া, সিগারেটের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা হবে।
বিড়ি, জর্দা, গুলের খুচরা মূল্যেও পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া, সব তামাকপণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে শুধু ধূমপান হ্রাস পাবে না; বরং ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। পাশাপাশি প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে, যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ তরুণও অন্তর্ভুক্ত।
এ কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মার কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়েরসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা।