নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের (এমপি) গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সংসদের বাজেট অধিবেশনে আইনটি সংশোধন নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। ফলে এমপিদের আগের মতো বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল রেখেই অর্থবিল পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে বেশির ভাগ সংসদ সদস্যের হ্যাঁ সূচক কণ্ঠভোটে অর্থবিলটি পাস হয়। বিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইটেক পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুল্ক-করসংক্রান্ত আগের সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করলে অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সেটি গ্রহণ করেন। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটের আর কোনো সংশোধনী গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি কম কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলসহ বেশ কিছু প্রস্তাব সংশোধনের দাবি থাকলেও অর্থমন্ত্রী তাতে গা করেননি। ফলে অর্থমন্ত্রী ৬ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের যে অর্থবিলটি এনেছিলেন, বলা যায় তার প্রায় পুরোটাই অবিকৃতভাবে পাস হলো।
বিকেলে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে প্রথমে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে দেশের আইটি খাতের প্রসার ও বিদেশি বিনিয়োগের ধারা বজায় রাখতে হাইটেক পার্কের কর অব্যাহতি-সুবিধা আগে যা ছিল তা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন। একইভাবে তিনি হাইটেক পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শূন্য শুল্কে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির সুবিধাও বহাল রাখার সুপারিশ করেন। পরে অর্থমন্ত্রী তা আগের মতো বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী তাঁর বাজেটের ওপর দেওয়া বক্তব্যে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দর, সুদের হারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে বাজেট দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নীতি সুদহার বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক সুদের হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। তা ছাড়া রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। মুদ্রানীতির সংকোচনমূলক উদ্যোগের সাথে সংগতি রেখে রাজস্ব নীতিতেও সংস্কার করা হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব নীতি-কৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করি।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানসহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করেছি। এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশে এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা রাখছি।’
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দেওয়া হলে তা বেশির ভাগ সদস্য নাকচ করে দেন। পরে অর্থমন্ত্রী বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে তা সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয়।