ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই ছাড়ের সময়সীমাও শেষ না হলেও গত এক বছরে খেলাপির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এটি ২০২১ সালে জুন পর্যন্ত একই সময়ে ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে যে ছাড় দিয়েছে, তাতে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে খেলাপি ঋণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপির ৪৪ ভাগ। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমান ৬২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ২ হাজার ৯৫৭ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আসছে। যে নীতিমালাগুলো সেখান থেকে আসছে সেগুলো ঋণ খেলাপিদের উৎসাহ দিচ্ছে। এর বিপরীতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যাংকের ভালো গ্রাহক। ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ আদায়ে বিমুখ হয়ে পড়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। যাতে খেলাপি ঋণ, পুনতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি কমে। এসব সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। এর আগেও ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে খেলাপি সমস্যার সমাধান হয়েছে।’