নিজস্ব প্রতিবেদক, (ঈশ্বরদী) পাবনা থেকে
ইউরেনিয়াম হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্নের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের মালিক হলো বাংলাদেশ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ৫২ মিনিটে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যক্তিগতভাবে দেখভাল করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
ক্রেমলিন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে পুতিন বলেন, ‘পাবনায় রাশিয়ার সহযোগিতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের পুরো সময়জুড়ে ব্যক্তিগতভাবে দেখভাল করব।’
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে নয়, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো লাইফ সাইকেলে আমরা বাংলাদেশি অংশীদারদের পাশে থাকব, সমর্থন করব।’
বাংলাদেশকে রাশিয়ার পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক—সমতা ও শ্রদ্ধার মধ্যে নিহিত। পরস্পরের স্বার্থ মেনে নেওয়ার মধ্যেই এটি নির্মিত হচ্ছে।’
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ জোগান দেবে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের দ্রুত বৃদ্ধিমূলক অর্থনীতির চাহিদা পূরণে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
রাশিয়া ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই যৌথ প্রকল্প বলে উল্লেখ করেন পুতিন।
পুতিন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করছেন। পিতার অসমাপ্ত কাজ সফলভাবে ও সম্মানের সঙ্গে অব্যাহত রাখছেন।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পে দুই দেশের স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প পরস্পরের জন্য উপকার এবং সহযোগিতা মজবুত করছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি শক্তি নিরাপত্তায় অবদান রাখবে।’
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও জ্বালানি প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াসেফ ওসমানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চয়ালি যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি। হস্তান্তর উপলক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আয়োজন করা হয় গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের। দুই দেশের সরকারপ্রধানের অনুমতিতে সেখানে পারমাণবিক জ্বালানির একটি নমুনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে হস্তান্তর করেন রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বৃহৎ প্রকল্প। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণসহায়তা হিসাবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
দুটি ইউনিট চালু হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রথম ইউনিটের ভৌত এবং অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশের বেশি। আর দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।