লোহিত সাগর হয়ে ইসরায়েলের পথে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো। এই তালিকায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠান ডেনমার্কের মেয়ার্স্ক ও জার্মানির হ্যাপাগ-লয়েডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন লোহিত সাগর হয়ে ইসরায়েল অভিমুখী একাধিক বিদেশি জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। এই গোষ্ঠী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসব হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিকবার।
কিছুদিন আগে হুতি গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ঘোষণায় জানিয়েছিল, লোহিত সাগর হয়ে যেসব জাহাজ ইসরায়েলে যাবে, সেগুলোর ওপর হামলা চালানো হবে। এরপর বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলাও চালানো হয়। হুতিদের ঘোষণার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, লোহিত সাগর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত নৌপথ। বিশ্বের অধিকাংশ তেল ও জ্বালানি পরিবহন হয় এই পথে।
বিবিসিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডেনিশ জাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠান মেয়ার্স্ক বলেছে, ‘এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর সাম্প্রতিক আক্রমণগুলো উদ্বেগজনক এবং নাবিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি।’ মেয়ার্স্ক বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘মেয়ার্স্ক জিব্রাল্টার ও অন্য একটি কনটেইনার জাহাজে দুটি ব্যর্থ হামলার পর বাব আল-মান্দেব প্রণালির হয়ে আমাদের যেসব জাহাজ ভূমধ্যসাগরের দিকে যাচ্ছিল, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের যাত্রাবিরতি করার নির্দেশ দিয়েছি।’
জার্মান জাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠান হ্যাপাগ-লয়েডও মেয়ার্স্কের মতো একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবারই হ্যাপাগ-লয়েডের একটি জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ অবস্থায় আগামী সোমবার নাগাদ এই অঞ্চল দিয়ে নিজেদের জাহাজগুলো চলাচল থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাব এল-মান্দেব প্রণালিটি বাংলায় মৃত্যুর দরজা নামেও পরিচিত। ৩২ কিলোমিটার চওড়া এই প্রণালিটি ইয়েমেন ও জিবুতি, ইরিত্রিয়ার মাঝে অবস্থিত। এই প্রণালি হয়ে খুব সহজেই এশিয়া থেকে কোনো একটি জাহাজ সুয়েজ খাল হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আটলান্টিকে পড়তে পারে। ফলে এশিয়া থেকে ইউরোপের নৌপথের দূরত্ব বিপুল পরিমাণে কমে যায়।
প্রতিবছর এই প্রণালি হয়ে অন্তত ১৭ হাজার জাহাজ পাড়ি দেয় এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ১০ শতাংশ পরিবাহিত হয়েছে এই প্রণালি হয়ে।