স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন ধাপে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। এই সময়গুলোয় বন্ধ ছিল তাঁত। লকডাউনে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁতশিল্প তার মধ্যে অন্যতম। শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিধিনিষেধ চলাকালে সিরাজগঞ্জে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা দৈনিক প্রায় ২১ কোটি টাকার ক্ষতি শিকার হয়েছেন।
কোরবানির ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ মাঝপথে রপ্তানিমুখী খাতের জন্য শিথিল করা হয়। কিন্তু সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প তার আওতাভুক্ত না হওয়ায় ৪ লক্ষাধিক তাঁতের অধিকাংশ বন্ধ থাকে। ফলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০ লক্ষাধিক মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গি, ধুতি-গামছাসহ অন্য পোশাক কেনাবেচার পাইকারি হাটগুলোও বন্ধ থাকায় এ সময়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কারও-কারও ব্যবসা।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সিরাজগঞ্জ জেলার ৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ, কাজীপুর থানাজুড়ে প্রায় ১৪ হাজার ৮৫০টি তাঁত কারখানায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯টি হস্ত ও ইঞ্জিনচালিত তাঁত রয়েছে। বর্তমানে ৪৬ হাজার ৪০৩টি তাঁতি পরিবার তা পরিচালনা করছে। জেলার মোট ৩২ লাখ ২০ হাজার ৮১৪ জন মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ ৮ হাজার ১৫৬ জন তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত।
তাঁত ব্যবসায়ী মাঈদুল ইসলাম মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের তাঁতশিল্পে মন্দা চলছে। এর পাশাপাশি লকডাউন শুরু হওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করি আমরা। ব্যাংক ঋণ, রং-সুতা বাবদ দেনা ইত্যাদি কীভাবে পরিশোধ করব, তার কোনো কূলকিনারা করতে পারছি না।
কয়েকজন তাঁত ব্যবসায়ীর ভাষ্য, সদ্য সমাপ্ত লকডাউনে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প চালুর সরকারি সিদ্ধান্তে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে গড়ে ওঠা গার্মেন্টস–কারখানা সচল হয়। কিন্তু শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান না হওয়ায় বিধিনিষেধে সিরাজগঞ্জের ৪ লক্ষাধিক তাঁতের অধিকাংশ বন্ধ থাকে।
তাঁরা আরও জানান, তাঁত শ্রমিকেরা দিনে গড়ে ৪০০ টাকা মজুরি পেতেন। সে হিসেবে ৩ লাখ তাঁতে দৈনিক ১২ কোটি টাকার মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ে একটি তাঁতে ব্যবসায়ীদের দৈনিক লাভ হতো অন্তত ৩০০ করে টাকা। সে হিসেবে তাঁদের দৈনিক লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি টাকা।
হ্যান্ডলুম পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান বদি জানান, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে তাঁতকল। কিন্তু যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতি ও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নইলে এ শিল্প হুমকিতে পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাঁতশিল্পের জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে সহায়তা দিতে হবে।