হোম > অর্থনীতি

রিজার্ভের মতো ফুলিয়ে দেখানো হয় বিদ্যুতের তথ্যও

রোকন উদ্দীন, ঢাকা

ফাইল ছবি

বিশ্বে গড়ে যেখানে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার হয় ৩ হাজার কিলোওয়াট, সেখানে দেশে মাত্র ৪৬৫ কিলোওয়াট। কিন্তু তারপরও দেশে ঘন ঘন লোডশেডিং এবং গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে শিল্প খাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব সমস্যার পেছনে মূল কারণ ছিল সীমাহীন দুর্নীতি, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে পাওয়ার প্ল্যান্ট অনুমোদন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মতোই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তথ্যকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো এবং কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগ।

শেখ হাসিনার শাসনামলের ১৫ বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের করা অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে এমন তথ্য উঠে আসে। গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের দায়িত্বকালে বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য অর্জনের দাবি করে আসছিল। উৎপাদনক্ষমতা ৫ হাজার ৭১৯ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে বলে দাবি করে। তবে দেশ এখনো ঘন ঘন লোডশেডিং এবং গ্যাসের তীব্র সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির জন্য ডিজাইন করা একটি ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানিতে নির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে জ্বালানি তেলের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের ট্যারিফ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা নাগরিকদের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে। যদিও জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হয়েছে, তবে সরবরাহ অনিয়মিত এবং অবিশ্বাস্য ব্যয়বহুল, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাধা সৃষ্টি করছে।

ঘুষ-বাণিজ্য

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কমিশন আদায়ের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের লেনদেনের কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকলেও প্রকল্প ব্যয়ের কমপক্ষে ১০ শতাংশ অর্থ ঘুষ হিসেবে লেনদেন হয়েছে বলে অনুমিত হচ্ছে। সে হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার ঘুষ হিসেবে হাতবদল হয়েছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (এমপিইএমআর) কোনো পূর্ণকালীন মন্ত্রী ছিলেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি দলের সদস্য, লবিস্ট, বেসরকারি ব্যবসায়ীরা এবং স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠেছিল অঘোষিত অংশীদার। এ খাতের প্রায় সব প্রকল্পই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতির মাধ্যমে। জ্বালানি উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎ বিভাগ ছিল এসব দুর্নীতির প্রধান মাধ্যম ও অংশীদার। ছোট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে আদানির মতো বড় প্রকল্প—প্রতিটি চুক্তিই পিএমও দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল; যাদের আগে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সামিট, রিলায়েন্স এবং ইউনাইটেড গ্রুপের মতো গোষ্ঠীগুলোকে ৩৫০ মেগাওয়াটের বেশি গ্যাস প্ল্যান্টের জন্য নির্বাচিত করা হলেও এস আলম গ্রুপের মতো সম্পূর্ণ নতুনদের জন্য ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা প্ল্যান্টের চুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

ফোলানো তথ্যে বিপাকে মজুত

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার অন্যতম কারণ হলো সঠিক তথ্য না দেওয়া। টাকার মজুতের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিসংখ্যানেও সরকার রাজনীতিকরণ করেছিল। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ২০২১ সালের জন্য নির্ধারিত ২৪ হাজার মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দাবি করা হয়েছিল, যাতে ৩ হাজার মেগাওয়াটের নন-গ্রিড ক্যাপটিভ পাওয়ার এবং ৪৫০ মেগাওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে এগুলোকে গ্রিড ক্ষমতা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সরবরাহে ৭-৮ শতাংশ চুরি

উচ্চ ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের সময় গ্যাসের ক্ষতি ১০-১২ শতাংশে পৌঁছায়; এর ৭-৮ শতাংশই চুরি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়; যা প্রায় ২০০ মিলিয়ন সিএফডি। আর এই গ্যাসের মূল্য এলএনজি আমদানির হিসাবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। এই আস্থা থেকে উত্তরণে কমিটি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বরাদ্দ ও মূল্যায়ন নীতিতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়ে সন্দেহ

রুশ প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই করে রূপপুরে দুটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভিভিইআর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। প্রাথমিক খরচ ৫৫০ মিলিয়ন ডলারসহ মোট খরচ হবে ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে, যার সুদের হার লাইবর প্লাস ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। তবে অনেকে মনে করেন, এই চুক্তি অতিমূল্যায়িত এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্ল্যান্টগুলোর একটি।

ভারতের তামিলনাড়ুর কুদাঙ্কুলাম নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিটও একই প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দিচ্ছে। সেখানে তারা ২ হাজার মেগাওয়াটের জন্য খরচ নিচ্ছে ৬ দশমিক ৭২১৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া রোসাটম মিসরে ৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে, যার আনুমানিক খরচ ৩০ বিলিয়ন ডলার।

এলএনজিতে ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর এলএনজিতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের মোট বকেয়া প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা (৪ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার)।

শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্পের ইউ-টার্ন, সির সঙ্গে ফোনে আলাপের ঘোষণা

নীতির জট খুললেই দুয়ার খুলবে বিনিয়োগের

১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের হান্ডা

ব্যাংক খাতে সুশাসন চায় আইএমএফ

৪ প্রতিষ্ঠান পেল ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’

ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় চাঙা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর আপাতত ভরসা ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দর

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: বেনাপোল থেকে ফিরে এল ৪ ট্রাক রপ্তানি পণ্য

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক

চীন ছাড়া সব দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক ৯০ দিন স্থগিত ঘোষণা করলেন ট্রাম্প