নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাময়িকভাবে এ নীতি কাজে এলেও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে। মুদ্রানীতিতে সুদহার আরও বাড়ালে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। এতে করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বিবার্ষিক পর্যালোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। সেমিনারে দেশের মাইক্রো-অর্থনীতির নানান দিক, মুদ্রানীতি এবং বেসরকারি খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার সার্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) মো. সেলিম আল মামুন, বেসরকারি সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক খান আহমেদ সাঈদ মুরশিদ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগে উচ্চ সুদহারের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও কমে যায়। ইতিমধ্যে এসএমই খাতে এর প্রভাবে ঋণের সংকট তৈরি হয়েছে। ফরেন ট্রেড ক্রেডিটের পরিমাণও কমে গেছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে কোনোভাবেই এই উচ্চ সুদহার আর ধরে রাখা উচিত হবে না। বরং বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির স্বার্থে আগামী ডিসেম্বরের পর সুদহার কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারের হাতে আরও কিছু উপকরণ আছে জানিয়ে আশরাফ আহমেদ বলেন, খাদ্যপণ্যের অপচয় দেশে মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। উৎপাদন পর্যায়ে এই অপচয় কমিয়ে আনা গেলে মূল্যস্ফীতি কমবে, আমদানি চাহিদাও কমবে।
আশরাফ আহমেদ বলেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য ঋণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ঋণ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে কর রাজস্ব বাড়াতে হবে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য ফেরানোর ওপর জোর দিয়ে আশরাফ বলেন, দেশের ৫০টি ব্যাংক ভালো থাকলেও ১০টির অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। এগুলো রিকভারি করতে হবে। আমানতকারীর আমানতের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আরও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মো. সেলিম আল মামুন। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। মূল্যস্ফীতি যত দিন না কমবে, তত দিন নীতি সুদহার বাড়ানো হবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সরাসরি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ঠিকভাবে কাজ করলে আট-দশ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে।