মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে নিয়মের কোনো তোয়াক্কাই করছে না রূপালী ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। আইন বলা হয়েছে, সাধারণ বিমা কোম্পানিকে মোট সম্পদের ন্যূনতম সাড়ে ৭ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে সরকারি বন্ডে। কিন্তু কোম্পানিটি বিনিয়োগ করেছে ন্যূনতম সীমার চেয়েও কম। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।
আইডিআরএর তথ্যমতে, রূপালী ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ দেখিয়েছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ আরও প্রায় ২ শতাংশ পরিমাণ সম্পদ বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের দায়ে কোম্পানিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আইডিআরএ।
বিমা আইন ২০১০-এর ধারা ৪১ এবং বিমা (নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা-২০১৯-এর ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়, নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সম্পদের অন্যূন ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সম্পদের বাকি অংশ ৯টি খাতে নির্ধারিত হারে বিনিয়োগ করা যাবে। আর লাইফ কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে।
সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রূপালী ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান মুখ্য নির্বাহী (সিইও) ফাওজিয়া কামরুন তানিয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিনিয়োগ কম ছিল, আস্তে আস্তে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।
বিমা কোম্পানিটি এক প্রান্তিক কিংবা দুই প্রান্তিকে এই কাজ করছে তা নয়, বরং বছরের পর বছর এই অনিয়ম করে যাচ্ছে বলে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ এসেছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল অর্থাৎ সম্পদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৬১ কোটি ৭১ লাখ ২৯ হাজার ৩৮ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছিল মাত্র ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট সম্পদের ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আরও ৬ শতাংশ সম্পদ সরকারের বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু কোম্পানিটি তা করেনি। এর আগের বছরগুলোতে এই ধারা অব্যাহত ছিল বলে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে আইডিআরএর পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিয়ম অনুসারে সরকারের ট্রেজারি বন্ডে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু কোম্পানি করেছে মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশ। নিয়ম ভঙ্গ করায় কোম্পানিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এই কাজ না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে মুনাফা বেশি। ফলে সেখানে লাইফ, নন-লাইফের প্রায় সব বিমা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু রূপালী ইনস্যুরেন্স এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যত্র অর্থ বিনিয়োগ করছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ।