আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ বাড়ছে রপ্তানি খাতে। ক্রেতারা দেশের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা জানতে চাচ্ছে। কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধসহ নানান কারণে ভাবমূর্তি সংকট বাড়াচ্ছে। তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আস্থার সংকটে ভুগছেন বলেও জানান উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ। যদিও নিজেরা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে পোশাক ও চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সরকারের উচিত যেকোনো মূল্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
দেশের অচলাবস্থা পোশাক খাতের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ যোগাযোগ না হওয়ার কারণে কোনো অর্ডার অন্যদিকে শিফট করে ফেলেছে কি না, সেটা আমরা এখনো বলতে পারছি না। ধারণা করছি, কিছু অর্ডার অন্যদিকে চলে গেছে।’ তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে আগামীর ব্যবসা। তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না যে ইন্টারনেট বন্ধ।
ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন জানিয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘আস্থাসংকট দূর করতে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তারা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে আমাদের যেসব ক্রয়াদেশ দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো স্থগিত করে রেখেছে। পরিস্থিতি বুঝে তারপরে প্লেস করবে।’ তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আস্থার জায়গাতে আঘাত লেগেছে। তারা চিন্তা করছে, একটা দেশে যদি যোগাযোগই করতে না পারি, এখনই এই অবস্থা, সামনে কী হবে?’
পরিস্থিতির কারণে অনেক পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানান রুবেল। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো সুযোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এতে কিছু অর্ডার তো ক্রেতারা অন্যদিকে সরানোর চিন্তাভাবনা করছে বা করবেই।’ তিনি বলেন, এখনো ইন্টারনেট নেই, অফিসগুলো পুরোপুরি চলছে না। অনেক অর্ডার ক্যানসেল হবে বা ডিসকাউন্ট চাইবে। ফলে ওই ক্ষতিগুলোও যোগ হবে।
পোশাক খাতের ওপর তৈরি হওয়া নেতিবাচক প্রভাব বর্ণনা করে মাইক্রোফাইবার গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) ড. কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, ‘আমরা আশঙ্কায় আছি, ক্রেতারা আমাদের দামে ছাড় দেওয়ার দাবি তোলে কি না। আবার তারা সি শিপমেন্টের পরিবর্তে এয়ার শিপমেন্ট করার কথাও বলতে পারেন। সেটা করতে হলে আমাদের খরচে পাঠাতে হবে। অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’ আস্থা ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে জাতীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।কোটি টাকা দিয়েও সেটা কেনা যায় না। আমরা চেষ্টা করছি কাটিয়ে ওঠার জন্য।’ চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্যের রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তা এবং জিহান ফুটওয়ারের এমডি শাহজাদা আহমেদ রনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোটা বিনিয়োগ করে বসে আছি। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এখন আশঙ্কায় আছি বড় কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। ক্রেতারা দেশের
পরিস্থিতির কথা জিজ্ঞেস করছে। আস্থা কমছে তাদের। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’