Ajker Patrika
হোম > অর্থনীতি

বিলুপ্তির পথে বগুড়ার অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, ২৪ বছরে বন্ধ ৪০ কারখানা

গনেশ দাস, বগুড়া 

বিলুপ্তির পথে বগুড়ার অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, ২৪ বছরে বন্ধ ৪০ কারখানা
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকা মেসার্স সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কসে হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত এক শ্রমিক। সম্প্রতি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া বন্দর। রেল যোগাযোগ থাকায় ব্রিটিশ আমলে সেখানে অ্যালুমিনিয়াম কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন হীরালাল আগরওয়ালা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ভারতে চলে গেলে কারখানাটি মেসার্স খেতওয়াত অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ নামে লুৎফর রহমান মোল্লা পরিচালনা শুরু করেন। এরপর পাকিস্তান আমলে তালোড়ায় ছোট-বড় আরও সাতটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা স্থাপিত হয়।

এসব কারখানায় তৈরি করা হতো হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন তৈজস। সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয় অনেকে। কিন্তু গ্যাস না পাওয়া, শিল্পনগরীতে প্লট না থাকাসহ নানা সংকটে তালোড়ার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।

অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামের একটি কারখানা লোকসানের মধ্যেও টিকে আছে। সেখানে বিভিন্ন তৈজস তৈরি হয়। ছোট পাঁচটি কারখানা তালোড়াতে থাকলেও সেখানে তৈরি হয় খেলনাসামগ্রী।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্লাস্টিক, মেলামাইন ও সিরামিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজার হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য। একসময় অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর ব্যাপক কদর থাকলেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে না পেরে এর চাহিদাও কমছে দিন দিন। পাশাপাশি কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি আর গ্যাস-সংযোগের অভাবে বন্ধের পথে বগুড়ার অধিকাংশ কারখানা। কিছুদিন আগেও যে কারখানাগুলোয় কর্মব্যস্ত ছিল, সেগুলোও এখন বন্ধের পথে। তালোড়াসহ বগুড়া শহরের বিসিক শিল্পনগরীতে ছোট-বড় ৮০টির বেশি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ছিল একসময়। এর মধ্যে ২৫টি ছিল বড়। বড় কারখানাগুলোর মধ্যে এখন টিকে আছে একটি। আর ছোট ছোট কারখানা চালু আছে ৮ থেকে ১০টি। চালু থাকা কারখানাগুলোও এখন অস্তিত্বসংকটে ভুগছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ বছরে ছোট-বড় প্রায় ৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে তালোড়ায় বড় কারখানাগুলোর মধ্যে সচল আছে সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম। ১৯৯৬ সালে কারখানাটি চালু হয়। এ কারখানায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় ডেকচি, সসপ্যান, হাঁড়িপাতিল, বালতি, কড়াইসহ নানা ধরনের তৈজস তৈরি হয়। নানামুখী সংকটের মধ্যেও চালু থাকা এই কারখানা এখন ধুঁকছে।

কারখানাটির ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শহরে গ্যাসচালিত কারখানা চালু হওয়ার কারণে আমাদের ব্যবসায় প্রথম ধাক্কা লাগে। এখানে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফার্নেস অয়েল। কয়েক বছর ধরে এই জ্বালানির দাম হু হু করে বেড়েছে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই আমরা শহরের কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। আবার বগুড়ায় বিসিক শিল্প এলাকায় আমাদের নামে কোনো প্লট বরাদ্দ না থাকায় স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।’

লোকসানের মুখে ২০১৫ সালের দিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় তালোড়ার রয়্যাল অ্যালুমিনিয়াম নামক আরেকটি কারখানা। চালু থাকা অবস্থায় কারখানাটিতে মাসে গড়ে ২১ হাজার কেজি অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরি হতো। কারখানাটিতে কাজ করতেন শতাধিক শ্রমিক।

বগুড়া শহরের বিসিক এলাকায় প্রগতি মেটাল নামক অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করেন আব্দুর রহমান, কাকলি, হাজেরাসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা বলেন, ‘একসময় আমরা কাজ করতাম তালোড়ায়। সেখানে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চলে আসি শহরে। কিন্তু আগের তুলনায় কাজের চাপ কম হওয়ায় এই পেশায় থেকে সংসার চলছে না। কারখানার মালিকেরা তাঁদের খরচ পোষাতে না পেরে মজুরি দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়ার উপমহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিসিকের পক্ষ থেকে ছোট উদ্যোক্তাদের অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে। বগুড়া উত্তরবঙ্গের মধ্যে শিল্পাঞ্চল। এখানে ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক। সেই অনুযায়ী প্লটের সংখ্যা সীমিত। ইচ্ছা থাকলেও সব প্রতিষ্ঠানকে প্লট দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বগুড়ায় আরেকটি শিল্পনগরী হওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। সেটি চালু হলে অনেকেই প্লট পাবেন।

বাইডেনের পাঠানো অর্থে নজরদারির ইঙ্গিত, সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা

বিমানের টিকিটে ১০ দিনের শুল্ক ছাড়

বসন্তের রঙিন উৎসবে প্রাণবন্ত লেক সিটি কনকর্ড

কিছু ব্যাংক বাঁচানো অসম্ভব: গভর্নর

আবারও মাইন্ডশেয়ার বাংলাদেশ পেল সর্বোচ্চসংখ্যক ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ড

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও চাপ রয়ে গেছে: এমসিসিআই

আমরা একটা ঋণগ্রস্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি: এনবিআর চেয়ারম্যান

সেইলরের ঈদ আয়োজন

এআই নির্ভরতা বাড়াচ্ছে ডিবিএস ব্যাংক, চাকরি হারাবেন ৪০০০ কর্মী

শুরু হলো ৩ দিনব্যাপী বাপা ফুডপ্রো