নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অর্থবছরের মাঝামাঝি নজিরবিহীনভাবে অধ্যাদেশ জারি করে অর্ধ শতাধিক পণ্য ও সেবার উপর শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আত্মঘাতী’ এই পদক্ষেপ জনগণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ, এই খরচ পুরোটাই জনগণের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। এর ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে।
আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নতুন বছরে ডিসিসিআই’র কর্ম-পরিকল্পনা উপস্থান করেন তাসকীন আহমেদ।
ঢাকা চেম্বারের নতুন সভাপতি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে আমরা দেখছি সরকার প্রাইভেট সেক্টরের উপর শুল্ক- ভ্যাট চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, বাৎসরিক সরকারি খরচ প্রকাশ করুন। সব খরচ ব্যবসায়ীদের উপর না চাপিয়ে সরকারি খরচ কমান। সরকারি খরচ ২০ শতাংশ কমালেই ৫০ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে। এ দিয়ে বাজেট ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে কীভাবে মূল্যস্ফীতি কম রাখবে, এটি আমাদের বোধগম্য নয়। ’
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে সরকার গ্যাসের দাম প্রায় ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে গত তিন বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। ফলে প্রায় ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমাদের হাতে তো ম্যাজিক নেই যে ৪০০ শতাংশ প্রফিট করব?’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো আমরা চাহিদার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ গ্যাস পাচ্ছি না। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই অর্থনীতি ও রাজনীতি একই প্ল্যাটফর্মে যেন না আসে। রাজনীতি ও অর্থনৈতিকে আলাদা রাখতে হবে। রাজনীত ও ব্যবসা আলাদা থাকুক। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যেতে পারেন, কিন্তু ব্যবসার মধ্যে যেন রাজনীতি না ঢুকে।’
আগামী অর্থবছর আসতে বাকি এখনো প্রায় ৬ মাস। কিন্তু তার আগেই গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এক অধ্যাদেশ জারি করে ৬৩টি পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও ভ্যাট বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কয়েক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কাহিল সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি করের চাপ দুঃসহ যাতনা নিয়ে আসবে। কারণ, পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে, সেটা ধনি-গরিব সব ক্রেতাকেই সমানভাবে দিতে হবে। এটি সমাজের উচ্চমাত্রার আয়বৈষম্যকে আরও তীব্র করবে।
সরকার প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পরিবর্তে জনগণের উপর পরোক্ষ করের বোঝা চাপাচ্ছে। এর ফলে গরিব এবং মাঝারি আয়ের মানুষের জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন।