নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গত ছয় মাসের অর্থনৈতিক সংকটে দেশের বিনিয়োগ প্রবাহে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বিনিয়োগ প্রবাহ কমেছে ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিনিয়োগ কমেছে ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অবশ্য এই সময় বিদেশি বিনিয়োগের ২৯ শতাংশই এসেছে বেপজার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ ছাড়া যেখানে ইপিজেডের বাইরের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সেখানে বেপজায় উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা সংকটের মধ্যেও দেশের উৎপাদন ও রপ্তানির গতিকে টিকিয়ে রেখেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর গ্রিন রোডে বেপজা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বেপজার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য (অর্থ) আশরাফুল কবির। এতে তিনি বেপজার সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সংকট এখনো রয়ে গেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই সময়ে সারা বিশ্বেই বিনিয়োগ কমেছে। করোনার পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আমেরিকা ও ইউরোপের মানুষের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এ সময় সেখানে অন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) ইমতিয়াজ হোসেন ও সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বেপজার আটটি ইপিজেড এবং একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, কুমিল্লা, উত্তরা, ঈশ্বরদী, কর্ণফুলী ও আদমজী ইপিজেডের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে রয়েছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ ছাড়া নতুন তিনটি এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের কাজ চলছে।
বর্তমানে বেপজায় ৪৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এসব কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৬ হাজার ৯১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার, আর রপ্তানি আয় হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫ জনের। নতুন করে চট্টগ্রামের মিরসরাই, যশোর ও পটুয়াখালীতে ইপিজেড শুরু হলে আরও ৪ হাজার ৩২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসবে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে আরও ৪ লাখ মানুষের।
বেপজার সদস্য আশরাফুল কবির বলেন, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৪৬৮ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বেপজার জোনগুলোতে এসেছে ৪২৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, বিদেশি বিনিয়োগের ২৯ শতাংশ এসেছে বেপজার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরে ৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানির ১৬ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের একক নির্ভরতা কমিয়ে ইপিজেডগুলো পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করছে। ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যের ৪৮ শতাংশ এখন বৈচিত্র্যময়। ফলে গত বছরে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বেপজা ২৮টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি করেছে এবং বর্তমানে বেপজায় বিশ্বের ৩৮টি দেশের বিনিয়োগ রয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে বেপজার মোট অবদান ২ হাজার ৪৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বেপজা শিল্পকারখানার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রেখেছে ৩১ হাজার ৭৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।