আগামী অর্থবছর আসতে বাকি এখনো প্রায় ৬ মাস। কিন্তু তার আগেই অধ্যাদেশ জারি করে প্রায় অর্ধশত পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে সহজ পথে হাঁটলেও এই সিদ্ধান্তে সমস্যা হবে গরিবদের।
এর আগে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু সংশোধনী এনে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই অধ্যাদেশের ফলে এখন থেকে রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এত দিন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হতো। বর্তমানে নন-এসি হোটেল সেবার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মিষ্টির ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রেস্তোরাঁ, পোশাক, হোটেল ছাড়াও উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদির ভ্যাট ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে।
বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার বার্ষিক ব্যবসা টার্নওভারে ভ্যাট হার ৪ শতাংশ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার বার্ষিক টার্নওভার অতিক্রম করা ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া ৫০ লাখ টাকার নিচে টার্নওভারের ব্যবসাগুলোর জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল না, যা এখন কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে ৩০ লাখ টাকার বেশি টার্নওভার থাকলেই ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে।
মূল্যস্ফীতিতে কাহিল সাধারণ মানুষের ওপর এ কৌশল চাপ আরও বাড়াবে। কারণ, পণ্য এবং সেবার দাম বাড়বে বলে এ ধরনের পরোক্ষ করের বোঝা গরিব এবং মাঝারি আয়ের মানুষের ওপর সমানভাবে পড়বে। এটি সমাজের উচ্চমাত্রার আয়বৈষম্যকে আরও তীব্র করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কঠিন পথে না গিয়ে সহজ পথে হাঁটল। পরোক্ষ কর ধনী-গরিব সবার জন্যই সমান। পরোক্ষ কর বাড়লে ধনীদের সমস্যা হয় না, সমস্যা হয় গরিবের। এতে অসমতা আরও বাড়বে।