খেলাপি ঝুঁকির কারণে চামড়া খাতে ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনছে ব্যাংকগুলো। আসছে কোরবানির ঈদ ঘিরে ৪৪৩ কোটি টাকার ঋণ ২৫৯ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে এবার অপেক্ষাকৃত কম হারে ঋণ পাবেন চামড়া খাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ডজনখানেক ব্যাংক ঋণ দেয়। আবার সেই লক্ষ্যের সামান্য অংশই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এ বছর কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য প্রায় অর্ধেক কমানো হয়েছে। আর ২০২১ ও ২০২০ সালে তা ছিল যথাক্রমে ৫৮৩ কোটি ও ৬৪৪ কোটি টাকা। এখানে দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে কমছে চামড়া খাতের ঋণ। আবার বরাদ্দকৃত অর্থের একেবারে ক্ষুদ্র একটা অংশ পান চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এ খাতের উদ্যোক্তারা জানান, ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল জোগান আসে কোরবানির ঈদে। চাহিদার ৭০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এ সময়, যার ওপর ভর করেই সারা বছর সচল থাকে এআ শিল্প। চামড়া সংগ্রহে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের দরকার হয় ব্যবসায়ীদের। অথচ ঠিকমতো তা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১২টি ব্যাংক মিলে ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে জনতা ব্যাংক। মোট পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ২৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৩০ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৫ কোটি ৩১ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৬ কোটি ৫০ লাখ, সিটি ব্যাংকের ২০ লাখ, এনসিসি ব্যাংকের ২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কোরবানি ঈদের চামড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু এটা শুভংকরের ফাঁকি। কেননা, বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ১০ শতাংশ বণ্টন হয়। সেটাও আবার যেসব ট্যানারি ব্যবসায়ীর সক্ষমতা থাকে, কেবল তাঁদেরই পুনরায় ঋণ দেয় ব্যাংক।
যাঁরা বকেয়া পরিশোধ করতে পারেন না, তাঁদের ঋণ পুনঃ তফসিল করে কিছু অংশ ঋণ দেওয়া হয়। প্রকৃত পক্ষে তাঁরা নতুন ঋণ পান না। এই খাতে আগের যে টাকা বকেয়া আছে, সেটা ব্লকে নিয়ে নতুন করে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর চামড়া খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু বিতরণ কখনো ১০০ কোটি টাকা সীমা অতিক্রম করেনি।
ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকা নিয়ে ট্যানারিগুলোর তা পরিশোধ না করার প্রবণতা রয়েছে। তবে ২ বা ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুরোনো ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আগের টাকা পরিশোধে আগ্রহ দেখান না বলে তাঁরা নতুন ঋণ পান না।
একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোরবানি ঈদ সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন নীতিমালার আলোকে ঋণ দেওয়া হয়। গত বছর কোরবানির ঈদে ঋণ নিয়ে যাঁরা পরিশোধ করেছেন, তাঁরা ঋণ পাবেন। যদি তাঁরা অর্ধেক ঋণ পরিশোধ করেন, তাহলে ঋণও অর্ধেক পাবেন। চামড়াশিল্প রক্ষায় এ খাতে অর্থায়ন যেন সমস্যা না হয়, এ জন্য ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।