হোম > অর্থনীতি

ক্রেতার অভাবে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পাথরের বিশাল স্তূপ

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 

অবিক্রীত পাথরের স্তূপ জমেছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে। প্রতিবছর যে পরিমাণ পাথর তোলা হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেকই বিক্রি হচ্ছে না। খনির ৯টি ইয়ার্ডে বর্তমানে অবিক্রীত পাথরের মজুত দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টনে। গুণগত দিক থেকে এসব পাথর আন্তর্জাতিক মানের হওয়া সত্ত্বেও ক্রেতা মিলছে না। সরকারি কেনাকাটার দরপত্রে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে।তদারকির দুর্বলতায় খোদ সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানই এটি প্রতিপালন করছে না; বরং দেশের বাইরে থেকে অকারণে পাথর আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে খনি ইয়ার্ডে মজুত কঠিন শিলার বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় খনি থেকে নতুন পাথর উত্তোলন তথা উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দেখা দিয়েছে অর্থসংকট। এতে খনির ঠিকাদারের বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, এর ধারাবাহিকতায় গত মাসে পেট্রোবাংলার অপর প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া খনি থেকে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি কর্তৃপক্ষকে ৩০ কোটি টাকা ধার নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রাসংকটের এই সময় পাথরের আমদানি প্রবণতা বাড়ায় দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে লাখ লাখ ডলার। তদুপরি মজুত থাকা পাথর আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় সরকারও এর থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। সার্বিক বাস্তবতায় খনির ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক ও খনিসংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবন-জীবিকা নির্বাহে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, খনি শুরু থেকে ভূগর্ভের ১৫টি পয়েন্ট থেকে প্রায় দেড় কোটি টন পাথর উত্তোলন হয়েছে। দিন দিন এর উত্তোলন বাড়লেও বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। খনি ভূগর্ভে যে পরিমাণ পাথর রয়েছে, তা শত শত বছর ধরে উত্তোলন করা যাবে। এ জন্য দেশের রেল, নদীশাসন এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজে খনির পাথর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রসেসিং পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মুহাম্মদ আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ৮৮টি প্রকল্প চলমান। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগের কাজ করা হয়। শুধু সিসি ব্লকের কাজে পাথর ব্যবহৃত হয়।

যার সিংহভাগ আমদানি করা হয়, মাঝে মাঝে অল্প কিছু পাথর মধ্যপাড়া খনি থেকে নেওয়া হয়।’ দেশে পাথর থাকতে কেন তা আমদানি করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা খরা মৌসুমে প্রকল্পের কাজ করি। খনি কর্তৃপক্ষ ওই সময় চাহিদা অনুযায়ী পাথর দিতে পারে না।’

জানা গেছে, খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে দায়িত্বে রয়েছে জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে খনি থেকে ৫ ধরনের পাথর উত্তোলিত হচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার টন উত্তোলিত হচ্ছে। পাথর বিক্রির দায়িত্বে আছে পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন এমজিএমসিএল; যা ১৫০ জন নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়।

এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপক (পিইপিঅ্যান্ডএম) মো. আবু তালেব ফরাজী জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩২ টন, বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টন। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টন উত্তোলনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৯ লাখ ৬ হাজার ৫০৯ টন। সে অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন পাথর বিক্রি হয় ২৫-৩০ টন। বাকি পাথর অবিক্রীত থেকে যায়।

তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ২ কোটি ১৬ লাখ টন পাথরের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার রেলপথেই প্রতিবছর ১ কোটি সিএফটি পাথরের প্রয়োজন হচ্ছে। এ ছাড়া নদীশাসনসহ অন্যান্য উন্নয়নকাজে পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বেশির ভাগ আমদানি হয় ভারত, ভুটান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ড থেকে; যা হিলি, সোনারহাট, সোনামসজিদ, নকুগাঁও, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরসহ পানিপথে দেশে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার আজকের পত্রিকাকে জানান, দেশের মেগা প্রকল্পগুলোসহ অন্যান্য কনস্ট্রাকশন কাজ বন্ধ। ফলে পাথর বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। এ ছাড়া আগে ৫ শতাংশ কমিশন দেওয়া হলেও এখন ৩ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ফলে লাভ কমে গেছে। এতে ডিলাররা আগ্রহ হারাচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতারাও মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা কেনায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ওজন স্কেলের গ্যাঁড়াকলে পড়ে।

এই বাস্তবতায় সংকট উত্তরণে খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনিটি বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাথর আমদানি ওপর সরকারকে শুল্ক বাড়াতে হবে। একইভাবে মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালুও বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি খনির পাথর সরবরাহের জন্য নির্মিত মধ্যপাড়া খনি থেকে পার্বতীপুরের ভবানীপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অচল রেলপথটি সংস্কার করেও পরিবহন খরচ কমিয়ে বিক্রি বাড়ানো সম্ভব।

১৫ বছরে শেয়ারবাজার সংকুচিত হয়েছে, অনেক পিছিয়েছে: ডিএসই চেয়ারম্যান

মূল্যস্ফীতিসহ পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

নারীর প্রতি সহিংসতার অর্ধেকই অর্থনৈতিক

বিশ্ববাজারে বেড়েছে ডিজেলের দাম, রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফল

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

মাস্টারিং কমপ্লায়েন্স: ইনসাইটস অ্যান্ড স্ট্যাটেজিস ফর সোর্সিং অ্যান্ড সেলস লিডার্স ইন রেস্পন্সিবল টেক্সটাইলস সেমিনার অনুষ্ঠিত

আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন ৩ পণ্য লঞ্চ

২২ হাজার টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ল মিয়ানমারের জাহাজ

পরবর্তী দুই অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ হারে

সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি নামবে ৪.১ শতাংশে: বিশ্বব্যাংক

সেকশন