গত চার বছরে দেশে বিদেশি মদের বিক্রি ও আমদানি বেড়েছে। ২০২১ সালে দেশে ৬ লাখ লিটার মদ আমদানি হলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই সময়ে প্রতিবছরই কয়েক লাখ লিটার বিদেশি মদ আমদানি বেড়েছে। এদিকে এই চার বছরে দেশে সরকার অনুমোদিত বারের সংখ্যাও বেড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র বলছে, মদের অনুমোদন থাকা ব্যক্তিদের বন্ড সুবিধা যাচাই, অবৈধ আমদানি বন্ধ এবং দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দূতাবাস এবং নানা প্রকল্প চলমান থাকায় বিদেশিদের যাতায়াত ও বসবাস বাড়ায় দেশে বিদেশি মদের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যেও জানা যায়, দেশে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে। বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে কাজের অনুমোদন আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫৪৫ দশমিক ৫২ লিটার মদ আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ২২৫ দশমিক ২৮ লিটার মদ আমদানি হয়েছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৩ দশমিক ৫৭ লিটার। প্রায় ৩ লাখ লিটার আমদানি বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৮৬ লিটার। আর ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২ দশমিক ৮১ লিটার মদ আমদানি করা হয়েছে। প্রতিবছর ২-৩ লাখ লিটার মদ আমদানি বেড়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে আমদানি করা বিদেশি মদ বিভিন্ন ধরনের বার, ওয়্যারহাউস, দূতাবাসে বিক্রি করা হয়। বিক্রির চাহিদা বাড়ায় প্রতিবছর মদ আমদানি বেড়েছে। গত চার বছরে গড়ে আমদানি হয়েছে ৯ লাখ লিটারের বেশি বিদেশি মদ। এ সময়ে বেড়েছে বারের সংখ্যাও। ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকার অনুমোদিত ১৯৬টি বার ছিল। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ২৪৩টিতে।
অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, হোটেল বার, রেস্টুরেন্ট বার, পর্যটন করপোরেশন, ক্লাব বারগুলো দেশে উৎপাদিত হয় না এমন অ্যালকোহল আমদানি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনাপত্তিপত্র থাকতে হবে। মহাপরিচালকের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া ছাড়া অন্য কোনো ব্র্যান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করা যায় না।
বিদেশি মদ আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্সের আবেদনপত্র অনুযায়ী, কী কী ব্র্যান্ডের কতটুকু বিদেশি মদ আমদানি, রপ্তানি করতে ইচ্ছুক, উদ্দেশ্য কী, আগের আমদানি-রপ্তানির তালিকা, রুট, প্রবেশ, নির্গমন বন্দর, এ কাজে সহযোগিতাকারী—আমদানি-রপ্তানির সময় এসব জানাতে হয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিক্রির চাহিদার ওপর আমদানির পরিমাণ বাড়ে বা কমে। তবে বার্ষিক চাহিদার ৪০ ভাগ অ্যালকোহল বা মদ বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারে। আর বাকি ৬০ ভাগ দেশে উৎপাদিত উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
দূতাবাসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন বিদেশি নাগরিকেরা। বৈধ-অবৈধভাবে প্রায় দেড় লাখ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছেন। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৭ জন। আর অবৈধভাবে অবস্থান করছেন ১৩ হাজার ৫৭১ জন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৩০৩ জন বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে কাজের আবেদন অনুমোদন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। শিল্প খাতে অভিজ্ঞ জনশক্তির জন্য এসব বিদেশি কর্মজীবীর সংখ্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থান করা অনুমোদিত বিদেশি নাগরিকসহ দূতাবাসের জন্য গত চার বছরে আমদানি করা মদের পরিমাণ ৩২ লাখ ১ হাজার ১৯৮ লিটার। আর দেশের বিভিন্ন বারে নাগরিকদের জন্য আমদানি করা মদের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৭ লিটার। অর্থাৎ বাংলাদেশের নাগরিকদের চেয়ে বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রায় ৮ গুণ বেশি মদ আমদানি করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বারগুলো বার্ষিক চাহিদার ৪০ ভাগ অ্যালকোহল বা মদ নিয়ম মেনে অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারে। নিয়ম না মেনে এসব বার পরিচালনা না করলে লাইসেন্স বাতিলও করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত কয়েক বছরে নতুন কিছু বারের অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া দূতাবাস, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবংনানা প্রকল্পে বিদেশিদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় মদের বিক্রি বেড়েছে। এতে বিদেশি মদ আমদানির পরিমাণও বেড়েছে।