দেশে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন মিলমালিকেরাই। ঈদের আগে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনায় তাঁরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। অথচ দোষ চাপিয়েছেন মজুতদারি ও আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। তবে তাঁরাই আবার জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। এমনকি ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো সংকট থাকবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে মিলমালিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। বাজারে তেলের সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে কমানো হয়েছে। এমনকি তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে ভোক্তাদের বাধ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলমালিকদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। দরকার হলে আরেক দফা দাম বাড়ান, কিন্তু বাজার ঠিক রাখুন। সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের হয়রানি করবেন না। আর দোষ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপানোও বন্ধ করুন।
আসন্ন পবিত্র রমজানকে ঘিরে ভোজ্যতেলের বাজার যেন স্থিতিশীল থাকে, তা নিশ্চিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আলোচনায় রমজানের বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং ভোক্তাদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপির) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখন ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় আছে। বাজার পুরোপুরি নির্ভরশীল মাত্র ছয়টি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের ওপর। তিন-চার মাস ধরে তেলের বাজার অস্থির। ভোক্তাদের তেল কেনার সময় বাধ্য করা হচ্ছে চাল, আটা, চা-পাতাসহ অন্যান্য পণ্য নিতে। বাজারে এর স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে, অথচ মিলমালিকেরা তা স্বীকারই করছেন না। তিনি সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে কোম্পানি ও ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএনসিআরপির পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, রাজধানীর চারটি বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, খুচরা দোকানে তেলের সংকট রয়েছে, আর ডিলার ও পাইকাররা ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তেলের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাইকাররা বিক্রির রসিদ দেখাতে পারছেন না, আর মিলমালিকেরা এসও দিয়েও সময়মতো তেল সরবরাহ করছেন না। কিছু জায়গায় খোলা তেলের দাম বোতলজাত তেলের চেয়েও বেশি।
দোষারোপ বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি গোলাম মাওলা বলেন, দরকার হলে আবার দাম ঠিক করুন, কিন্তু বাজার স্বাভাবিক রাখুন। ভোক্তাদের হয়রানি করবেন না।
নিউমার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের জানান, বাজারে ৫ লিটারের তেলের সংকট চলছে। ডিলাররা বলছেন, সরকারের সঙ্গে কোম্পানির আলোচনা চলছে, দাম বাড়লেই তেল বাজারে আসবে।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, ৫ তারিখে ৭ কার্টন মাল পেয়েছি, তখন ৪০ কেজি পোলাওয়ের চাল দিয়েছে। রূপচাঁদা ২০ কার্টন তেলে ১ বস্তা পোলাওয়ের চাল ও ১ কার্টন সরিষার তেল দিয়েছে।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলেন, সরকার মূল্য কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, এজন্য কিছু কমানো হয়। বর্তমানে সবাই গতানুগতিক সরবরাহ করছে। আগামী ২৪ তারিখে বড় ধরনের চালান আসবে ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পর তেলের সংকট হবে না।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা দাবি করেন, নিয়মিত ড্রাম ও বোতলে ডিলারদের কাছে তেল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য স্থিতিশীল। একই সঙ্গে টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ অ্যাডিবল অয়েল চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি তেল আমদানি করছে, যা আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাজারে ঢুকবে।