নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশের ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে এ খাতের শ্রমিকদের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খরচ অনেক বেড়েছে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা নিম্নতম মজুরি হওয়া প্রয়োজন। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছেন মালিকেরা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘ট্যানারি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিং ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব করে সংস্থাটি। বিপরীতে শ্রমিক সংগঠনের দাবি, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করা হোক। তবে রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রস্তাবিত কোনো মজুরিই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। তবে উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে মজুরি নির্ধারণের আশ্বাস দিয়েছে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মজুরিসংক্রান্ত গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তানিম আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।
অনুষ্ঠানে সিপিডি জানায়, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের একটি শ্রমিক পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবারের খরচ মাসে ২০ হাজার ৫৬৪ টাকা। আর খাদ্যবহির্ভূত খরচ ১২ হাজার ৯১৪ টাকা। একেকটি শ্রমিক পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ৬। তার মধ্যে উপার্জনক্ষম সদস্য ১ দশমিক ৫। সেই হিসাবে শ্রমিকের মাসিক নিম্নতম মজুরি হওয়া দরকার ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা।
সিপিডির প্রস্তাবের বিষয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছি। ইতিমধ্যে প্রস্তাবটি মালিকপক্ষ ও মজুরি বোর্ডের কাছে দেওয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় সিপিডির এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর কারণ, আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, রপ্তানিতে চামড়ার ইউনিট মূল্য কমেছে। তবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি মজুরি নির্ধারণের চেষ্টা করব।’
ট্যানারি শিল্পের মজুরি বিষয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, মালিকপক্ষ বলেছে, এত পরিমাণে (সিপিডির প্রস্তাব) মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মজুরি বোর্ডে আলোচনা করে দেখা হবে, মজুরি কতটা বাড়ানো সম্ভব। যাতে শিল্প টেকে এবং শ্রমিকেরাও বেঁচে থাকে।’