হোম > অর্থনীতি

ন্যূনতম মজুরি: ‘একপেশে ঘোষণা, মালিকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে’

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা

ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা। মালিকপক্ষ প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা প্রস্তাব করলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৪০০ পোশাক কারখানা। আন্দোলন ভাঙচুর ও সহিংসতায় রূপ নিলে আইন–শৃঙ্খলার বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পুলিশের গুলিতে অন্তত দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি ঘোষণার কথা বলেছিল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

তবে আজ মঙ্গলবার মালিক, শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও সরকার পক্ষের মধ্যে আলোচনায় আগের প্রস্তাবের সঙ্গে নতুন করে মালিকপক্ষ ২ হাজার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করে। এটি ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

মালিকপক্ষের দাবি মেনে নিয়ে মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন ঘোষিত মজুরি নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তারের সঙ্গে। 

তৈরি পোশাক খাতের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি নিয়ে তাঁরা হতাশ। তাঁদের মতে, ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাবে মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে, উপেক্ষিত হয়েছে গরিব শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি। 

অর্থনীতিসহ দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছে, তা উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য মোটেও সহায়ক নয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। এই মজুরি মোটেও পর্যাপ্ত নয়।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার শ্রমিকদের প্রস্তাবিত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে মালিকদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার যে বৈশিষ্ট্য, সেটিকে অনেকাংশে একপেশে করে ফেলেছে সরকার।’

ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে অস্পষ্টতা থাকার সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ঘোষিত ন্যূনতম মজুরিতে স্পষ্ট করে বলতে—   গ্রেড–৭–এর শ্রমিকদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এটি যদি অন্য কোনো গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য ঘোষণা করা হয়, তাহলে শ্রমিকদের বঞ্চনা আরও বাড়বে। সামগ্রিকভাবে আমরা মনে করি, যেটি দেওয়া হয়েছে সেটি কোনোভাবেই শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

শ্রমিকেরা ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবি করছেন— এ প্রসঙ্গে ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাংলাদেশে সব সময় প্রয়োজনের চেয়ে কম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়টি ঐতিহাসিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। যার জন্য, দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও দাঁড়াতে পারছে না। এটি বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের সময়ও হয়েছে।’

শ্রমিকদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘২৩ হাজার টাকা বেতন কাঠামো এক ধাপে যদি বাস্তবায়ন করা নাও যায়, এটি বাস্তবায়নের একটি প্রক্রিয়া থাকলে এত দিনে এই যে বিশাল পার্থক্য, সেটি পূরণ হয়ে যেত। শ্রমিকদের মজুরি ধাপে ধাপে যদি বাড়ানো হতো, তাহলে শ্রমিকেরা অবমূল্যায়িত হতো না।’ 

শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে বিদেশি ক্রেতাদেরও দায় আছে বলে মনে করেন সিপিডির এই গবেষক। তিনি মনে করে, এ মুহূর্তে ক্রেতাদের কাছ থেকে একটি ঘোষণা আসা উচিত যে—   সরকার যেই ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে সেটি আরও বাড়ানো উচিত।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শ্রমিকদের খেয়েপরে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে বায়ারদের দায়িত্ব নিতে হবে। ন্যূনতম মজুরি যাতে সম্মানজনক হয়, সেটি নির্ধারণে বায়ারদের সহায়তা করা উচিত। মালিকপক্ষ বেতন বাড়ালে তারা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। বায়ারদের কাছে থেকে এ রকম একটা ঘোষণা আসা দরকার।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে ন্যূনতম বেতন কাঠামো মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেছে, সেটি নিয়ে শ্রমিকেরা খুবই ক্ষুব্ধ। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, ন্যূনতম মজুরির ব্যাপারে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা থেকে আলোচনা শুরু হবে এবং এটি একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, সরকার মালিকদের দেখল কিন্তু শ্রমিকদের কোনো দাবিই মেনে নেয়নি।’ 

নিত্যপণ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ তুলে কল্পনা আক্তার বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি বোর্ড যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে সেটি দিয়ে শ্রমিকের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা সম্ভব না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যে ত্রাহি অবস্থা সেখানে সরকার যদি না দেখে, তাহলে আমরা (শ্রমিকেরা) কোথায় যাব! এর আগে আমাদের দাবি ছিল, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা। এটা নিয়ে আমরা সরকারে কোনো হেলদোল দেখি না।’ 

শ্রমিকদের দাবির বিপরীতে সরকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে তাতে হতাশ হয়েছেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষ যেভাবে বাঁচতেছে, সেখানে এই মজুরি কিছুই না। আমাদের দাবির ৫০ শতাংশের একটু বেশি মজুরি বোর্ড প্রস্তাব করেছে। ২০১৮ সালে আমাদের মজুরি ছিল ৯৫ ডলার, আজকের বাজারে এটি হয়েছে ১০৯ ডলার। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তুলনা করলে সেটি কিছুই না।’

সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়ে এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরির যেই প্রস্তাব দিয়েছে, মজুরি বোর্ডকে সেটি পুনর্মূল্যায়ন করতেই হবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

ভরসার বিমায় হতাশার ছায়া

মিডিয়াকমের ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের শিরোপা পেল নিউজ ২৪

এনআরবি ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সাউথইস্ট ব্যাংকের ‘বিজনেস পলিসি ও প্ল্যানিং কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন শুরু

ইবিএল প্রধান কার্যালয়ে ‘আর্থিক তথ্য প্রকাশ’ বিষয়ে কর্মশালা

ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ‘পার্টনার্স টুগেদার’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

জুলস পাওয়ারের এমডি প্রয়াত নুহের লতিফকে বনানীতে সমাহিত

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-২০ বিশ্বকাপ বিনা মূল্যে দেখা যাবে টফিতে

পর্দা নামল ২৩তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক প্রদর্শনীর

সেকশন