সাকিবসহ হিরু সিন্ডিকেটের শেয়ার কারসাজির তথ্য মন্ত্রণালয়ে

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ২২: ৫৪

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক (গ্যাম্বলার) সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরু ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ তাঁর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘটিত শেয়ার কারসাজির তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। 

গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠিটি পাঠায়। অর্থ উপদেষ্টা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিরুর বিষয়ে বিভিন্ন সময় তদন্তে কারসাজির প্রমাণের ভিত্তিতে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। সবাই জানেন, কিছুদিন আগেই তাঁদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে কোনো কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে আগামীতে কমিশন আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ 

বিএসইসি জানিয়েছে, হিরু ও তাঁর সহযোগীদের শেয়ার কারসাজি প্রমাণ হওয়ায় বিভিন্ন সময় মোট ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ১২টির বেশি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় এ জরিমানা করা হয়। 

শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য এবং সহযোগীদের নাম উঠে এলেও কারো বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি হিরু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। হিরুর ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে আলোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও ছাড় দেয়নি বিএসইসি। 

‘পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি এবং এ সম্পর্কিত বিষয়ে আবুল খায়ের ও তাঁর সহযোগীদের ওপর আরোপিত অর্থদণ্ড’ শিরোনামে 

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে হিরু সিন্ডিকেটের বিও হিসাবের তথ্য তুলে ধরে বিএসইসি জানিয়েছে, সহযোগীদের সঙ্গে মিলে হিরু বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে করসাজি করেছেন। এতে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী। ওই চক্রের কারসাজি প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে বিএসইসি। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে হিরু ও তাঁর সহযোগীদের কারসাজির বিস্তারিত তথ্য ও জরিমানার বিষয়েও তুলে ধরেছে বিএসইসি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৯ জুন গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তাঁদের সহযোগীদের ৪২ লাখ টাকা, ২০২২ সালের ১৯ জুন ঢাকা ইনস্যুরেন্সের জন্য কাজী সাদিয়া হাসান ও তাঁদের সহযোগীদের ৯৫ লাখ টাকা এবং একই সময়ে এশিয়া ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের হিরুর দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

কারসাজির তথ্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৬ জুলাই ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজির জন্য হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর ও তাঁর সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, একই সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের জন্য হিরুর বোন কনিকা আফরোজ ও তাঁর সহযোগীদের ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ওই বছরের ২ আগস্ট ওয়ান ব্যাংকের জন্য আবুল কালাম মাতবর ও তাঁর সহযোগীদের ৩ কোটি টাকা, একই সময়ে বিডিকম অনলাইনের জন্য হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা, ৩০ অক্টোবর আপিডিসি ফাইন্যান্সের জন্য হিরু ও সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

এছাড়াও ২০২৪ সালের ২১ মার্চ জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের ও সহযোগীদের ২০ লাখ টাকা এবং গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য ফের ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ঘটনায় হিরুর ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসানকেও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। 

৩১তম বিসিএস ক্যাডারের সমবায় কর্মকর্তা আবুল খায়ের পাঁচ বছর আগেও বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আলাদিনের চেরাগ নিয়ে পুঁজিবাজারে আবির্ভাব ঘটে হিরুর। তিনি হিরু নামেই সমধিক পরিচিত। 

২০১৯ সালের নভেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন হিরু। প্যারামাউন্টের হাত ধরেই অন্যান্য ইনস্যুরেন্সের কারসাজিতে নামেন তিনি। পরে ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েন। 

পরিবারের সদস্য ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে কারসাজির বিশাল সিন্ডিকেট বা চক্র গড়ে তোলেন তিনি। এতে রয়েছে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রীর ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান। 

বাংলাদেশে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন হিরু। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অল্প সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে সমালোচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিরু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি শেয়ার লেনদেনের বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে। 

এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে।

সাত দিনে ২৭৯১ কোটি টাকার মূলধন যোগ হলো পুঁজিবাজারে

বেক্সিমকোর তিন প্রতিষ্ঠানে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বিএসইসির

শেয়ারবাজারে মোবাইল অ্যাপে লেনদেন বেড়েছে ২৬ শতাংশ

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ডিএসইর সিটিও জিয়াউলকে পুনর্বহালের উদ্যোগ