পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। ব্যবসা ও আর্থিক অদক্ষতার কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরি মন্দ হিসেবে চিহ্নিত। এই শ্রেণির কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনসহ সার্বিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যাখ্যা তলব চেয়ে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
২০২০ সালে ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে নির্দেশনা জারি করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) জন্য ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার বাধ্যতামূলক করা হয়।
তা পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় কারণ জানতে চেয়ে গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের গত ২৫ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেডের ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ক্যাটাগরি পরিবর্তন সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ‘জেড’ ক্যাটাগরির অধীনে লেনদেন করা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমিশনের ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশনার প্রাসঙ্গিক শর্তগুলো মেনে চলার ব্যধ্যবাধকতা রয়েছে।
উল্লিখিত নির্দেশনার ৭ নম্বর শর্ত অনুসারে, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অধীনে লেনদেন করা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সকল পর্যায়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে বিএসইসির কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর শর্ত রয়েছে। তবে ২০২০ সালে উল্লিখিত নির্দেশনা জারির পর বিএসইসি এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে কোনো প্রতিবেদন পায়নি। তাই এ পরিস্থিতিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ৬ (৩) এবং এক্সচেঞ্জস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ এর ধারা ২০ অনুযায়ী আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের অবস্থান ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার শর্তের মধ্যে রয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকেরা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর ও বন্ধকী দিতে পারবে না। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। পর্ষদ পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও স্পন্সররা অন্য কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো কোম্পানির পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না। ‘জেড’ ক্যাটাগরির সকল কোম্পানি ৬ মাসের মধ্যে এজিএম বা ইজিএম আয়োজন করবে। সব ধরনের শেয়ারহোল্ডার মিটিং (এজিএম/ইজিএম) ই-ভোটিং বা অনলাইনের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মে অথবা হাইব্রিড সিস্টেমে করতে হবে। পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ চার বছরের মধ্যে কোম্পানির সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতি করাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫টি কোম্পানিকে ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করেছে ডিএসই। ওই দিন থেকে কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিগুলো হলো-রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএএসআরএম), সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, অ্যাপলো ইস্পাত ও নূরানী ডাইং।
ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানিগুলো বিএসইসির আইন অমান্য করায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাটাগরি পরিবর্তনের কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোনো ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে না।