উন্নত জীবন গড়তে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে একটি দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন নুর আলম। কিন্তু টাকা নিয়ে দালালেরা তাঁকে ইতালির বদলে লিবিয়া নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখে। নির্যাতন চালিয়ে দেশে থাকা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু এত টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি তাঁর পরিবার।
পরিবারের অভিযোগ, নুর আলম মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় দালালদের নির্যাতনের কথা বারবার বলেছিলেন। এও জানিয়েছিলেন, তাঁকে মেরে ফেলা হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে কল করে স্বজনদের জানানো হয়, নুর আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু নুর আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে দাবি তাঁর পরিবারের।
লাশটি দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে নুরের পরিবার।
নুর আলম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। নুর আলমের বড় ভাই সিরাজ মোল্যা বলেন, নুর আলমকে ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান দালাল চক্রের সদস্য পার্শ্ববর্তী বারখারদিয়া গ্রামের মফিজ মোল্যা। এক বছর দুই মাস আগে ইতালি নেওয়ার জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন নুর । তাঁকে দেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে ৪ লাখ, আর ইতালি পৌঁছে বাকি ৪ লাখ টাকা দিতে বলেন মফিজ। কথামতো টাকা দিলেও নুরকে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে বেনগাজিতে একটি বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
একপর্যায়ে নুর দেশে ফিরতে চান। কিন্তু দেশে এসে দালালদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন এমন আশঙ্কায় তাঁকে হত্যা করা হয়। নুর আলমের ছেলে রাসু মোল্যা বলেন, ‘বাবাকে বাঁচাতে আমাদের জমিজমা সব বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।’
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা লিবিয়ায় অবস্থান করায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ‘নুর আলমের ঘটনাটি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের সহযোগিতা লিখিতভাবে চায়, আইন অনুযায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’