পেশায় আবাসিক হোটেলের একজন নিরাপত্তাকর্মী। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটকে নিজেকে র্যাবের সদস্য পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন সময় র্যাবের পোশাক পরে ছবি-ভিডিও পোস্ট করতেন। বেশ জনপ্রিয়তাও তৈরি হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শুরু করেন প্রতারণা। ১০০ জনের বেশি তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও নানা কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেন। অবশেষে র্যাবের হাতেই ধরা পড়লেন টিকটকার রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার মঈন। তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে র্যাবের পোশাক, মুঠোফোন, সাতটি সিমকার্ড ও বাঁশি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী নারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে র্যাব।
র্যাবের মিডিয়াপ্রধান বলেন, টিকটকার রাজের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তাকর্মী। টিকটকে র্যাবের পোশাক পরে নিজেকে র্যাব-৫-এ কর্মরত হিসেবে পরিচয় দিতেন। র্যাবের পোশাকের মতো পোশাক বানিয়ে টিকটকে ভিডিও তৈরি করতেন তিনি। টিকটকে রাজের ১৫ লাখ অনুসারী রয়েছে।
খন্দকার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে নারী পাচার চক্রের মূল হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি, ম্যাডাম সাহিদা, টিকটক হৃদয় বাবু ও তাঁর সহযোগী অনিকসহ বেশ কয়েকটি নারী পাচার চক্রের ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার র্যাব-২ ও র্যাব-৫-এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টিকটকার রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে টিকটকে র্যাব সদস্য পরিচয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং তাঁদের ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রতারণার মাধ্যমে অনেক নারীর কাছ থেকে স্বর্ণালংকারও হাতিয়ে নিয়েছেন রাজ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর গত দেড় বছরে রাজ র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তিনটি বিয়ে করেছেন। পরে প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে তিনজনই তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে রাজ র্যাবকে জানিয়েছেন, র্যাব পরিচয়ে নিজেকে নারীদের কাছে জাহির করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করে রাখতেন তিনি। সেগুলো ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকাসহ নানা সুবিধা নিতেন। গ্রেপ্তারের আগে র্যাব-২-এ বদলি হয়েছেন এ তথ্য দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।