কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হাড়-মাংস মানুষের কি না, তা নিশ্চিত হয়নি ১০ দিনেও। ফরেনসিক পরীক্ষায় মানুষের বলে নিশ্চিত হলে ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ের ডিএনএ নমুনা নিয়ে মেলানো হবে। ফলে আজীমের হত্যা মামলার তদন্তের বড় অগ্রগতি আটকে রয়েছে ফরেনসিক প্রতিবেদনের ওপর।
আজীমকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন ও নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকে কলকাতায় নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে।
সংসদ সদস্য আজীম হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র গতকাল শুক্রবার জানায়, সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে গত ২৮ মে উদ্ধার করা হাড়-মাংসের ফরেনসিক পরীক্ষা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাব। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। ওই হাড়-মাংস মানুষের কি না, তা নিশ্চিত না হওয়ায় আনারের স্বজনদের সঙ্গে সেগুলোর ডিএনও নমুনা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে না। তাই ভারতের ভিসা পেলেও ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিতে এখনো কলকাতায় ডাকা হয়নি সংসদ সদস্যের ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও ভাইকে। ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্তে এগোনো যাচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্র বলছে, সংসদ সদস্য আজীমের মরদেহ ও হত্যায় ব্যবহৃত আর কোনো আলামত উদ্ধার না হলে গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি ও এখন পর্যন্ত পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ করতে হবে। অবশ্য তাতে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা যাবে না।
পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংসদ সদস্য আজীম হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির কাছে এখন দুজন আসামি আছে। সিয়ামকে নেপাল থেকে এনেছে। জিহাদকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে। এই হত্যার বিচার কোন দেশে হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটে, সেখানেই তদন্ত হয়। আমরাও তদন্ত করছি, তারাও (কলকাতা পুলিশ) তদন্ত করছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো জায়গায় বিচার হতে পারে।’
টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। পরে তিনি নিখোঁজ হন। একপর্যায়ে খবর পাওয়া যায়, চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকার সোনা নিয়ে দ্বন্দ্বে আজীম খুন হন। ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সোনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বন্ধু শাহীনের পরিকল্পনায় ১৩ মে তিনি কলকাতায় খুন হন।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যা মামলায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ এ পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশে। আমানউল্লা সাইদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামের তিনজনকে জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।