মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। এর মধ্যেই কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরে আসতে শুরু করেছে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। অপরূপ হাওরের রূপ-লাবণ্য বাড়িয়ে তুলছে বাহারি পাখির ঝাঁক। প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমী মানুষ উপভোগ করছে এ সৌন্দর্য। তবে এ প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার অসাধু পাখি শিকারিরা।
তাঁদের অবাধ শিকার ও পাখি বিক্রির প্রবণতা এখানকার জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলেছ। সেই সঙ্গে অতিথি পাখি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। শীতের আনাগোনায় ধীরে ধীরে অডা, সাদা বক, ও পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি ভিড় করেছে হাওরে। বর্ষার পানি নেমে খেতের আইল ভেসে উঠছে। সেখানে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থেকে মাছ শিকার করছে পরিযায়ী পাখিগুলো। প্রতিবছর এমন সময় পাখি আসা শুরু হলে স্থানীয় পাখি শিকারিরা, নানারকম ফাঁদ তৈরি করে নির্বিচারে পাখি ধরে বিক্রি করে। সাম্প্রতিক, অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর, অষ্টগ্রাম সদর, কলমাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পাখি শিকার করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি এ অভিযোগের সত্যতাও মেলে। অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর ইউনিয়নের বড়বাজার এলাকায় আটটি অতিথি পাখি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক লোক (৩৭)। দরদাম শেষে ১ হাজার ১০০ টাকায় পাখিগুলো বিক্রি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন তিনি। পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে ওই শিকারি বলেন, ‘সংসারে অভাব, রোজ আনি রোজ খাই। একটু আয় বাড়ানো এবং বউ-বাচ্চাকে ভালো রাখার জন্য আমি পাখি ধরে বিক্রি করি। জানি পাখি ধরা অন্যায়, তাই গোপনে বাজারের আশপাশে বিক্রি করে দিই।’
পরিযায়ী পাখি শিকারের বিষে হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, ‘পরিযায়ী পাখিসহ কোনো পাখি শিকার করা সমর্থনযোগ্য নয়। পাখি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এসব পাখি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’
সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয় কিশোরগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘পরিযায়ী পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
পাখি শিকার রোধে প্রাথমিকভাবে আমরা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান করি। কিশোরগঞ্জে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর নেই। তাই, শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য তাঁদের অবহিত করি।’