বিশাল অট্টালিকার মতো একেকটি বাড়ি। সামনে লন। আরাম-আয়েশ তো আছেই, আছে বিলাসের সব রকমের ছোঁয়া। এসব বাড়িতে থাকতেন বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার করা পি কে হালদার, তাঁর আত্মীয় ও সহযোগীরা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ইডি) পরিচালিত তল্লাশি অভিযানে তাঁদের বিলাসী জীবনের দেখা মিলল।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে পি কে হালদার, তাঁর কয়েক ভাই, আত্মীয় ও সহযোগীদের সন্ধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নয়টি বাড়িতে একযোগে গতকাল শুক্রবার তল্লাশি চালায় ইডি। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সম্পত্তি কিনেছেন।
অশোকনগরে সুকুমার মৃধার বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। এ সময় সুকুমারের চার বিঘা জমি ও পুকুরসহ বিশাল বাড়িটি সিল করে দেন ইডির কর্মকর্তারা। সুকুমারের মেয়ে অতসী হাওলাদার, সহযোগী স্বপন মৈত্র ও তাঁর ভাই উত্তমের বাড়িতেও তল্লাশি হয়। তাঁদের দুই ভাইকে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুকুমার মৃধার বাড়ির কাছেই স্বপন মৈত্রের বিশাল অট্টালিকা, বাগানবাড়ির মতো দেখতে। স্বপনের পরিবার অবশ্য এখানে থাকতেন না। তাঁর ভাই উত্তম বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। দুই বছরের অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী রচনা মৈত্র। করোনাকালে লকডাউনের আগে এলেও এখনো বাংলাদেশে ফেরেননি তিনি।
রচনা বলেন, ‘আমার স্বামী ভাশুরকে সাহায্য করত। আমি জানি সে মাছের ব্যবসা করে। কালকে (শুক্রবার) রাতে ওদের ধরে নিয়ে গেছে (ইডি)। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ আরও অন্যান্য কাগজ নিয়ে যায়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বড় সমস্যায় আছি।’
স্বপনের প্রতিবেশীরা বলছেন, টাকার খুব অহংকার ছিল তাঁর। আর ছিল জমি কেনার শখ। মাছের ব্যবসার আড়ালে কী করে এত টাকা তাঁরা পেতেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিল পাড়াতে। তবে উত্তমকে নিয়ে তাঁদের তেমন সন্দেহ হয়নি। উত্তমের স্ত্রী রচনার প্রশংসাই করলেন তাঁদের প্রতিবেশী টুম্পা সরকার।
সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীবকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সঞ্জীবের স্ত্রী, সুকুমার মৃধার মেয়ে অতসী জানান, তিনি পিকে হালদারকে চিনতেন। আর তাঁর বাবা (সুকুমার) রয়েছেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, ‘বহু রাত পর্যন্ত তল্লাশি চলেছে। যাওয়ার সময় মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। আমাদের বাড়িতে তেমন কিছু পায়নি। তবে বলে গিয়েছে ডাকলেই দেখা করতে হবে।’ অতসী জানান, তাঁর স্বামী রেডিমেড গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন।
প্রসঙ্গত, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে শনিবার ভারতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর আরও পাঁচ সহযোগীকে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার ও নয়ছয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক মামলা রয়েছে।
পি কে হালদার সম্পর্কিত আরও খবর: