দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার মুরাদনগরের এক গ্রামে ডাকাত সন্দেহে বাড়ি থেকে বের করে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কয়েক গ্রামের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। নিহতদের মধ্য একজন ওই বাড়ির জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালসুতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে নুরু মিয়া (২৮) এবং একই উপজেলার পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৭)। আহত অপরজন সদর দক্ষিণ থানার বাগমারা গ্রামের শাহজাহান। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে নিহতেরা ডাকাত কি না, সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, `নিহত ও আহতদের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত নুরু মিয়ার শ্বশুরবাড়ি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুই রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কেউই সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। নিহতদের অতীত কর্মকাণ্ড যাচাই করা হচ্ছে।'
আর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মর্গে) পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোড়ারচর গ্রামে ডাকাতি করতে এসে ধাওয়া খেয়ে ডাকাত দলের তিন সদস্য পাশের পালাসুতা গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, এমন খবর এলাকায় মাইকিং করা হয়। এতে কয়েক গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে ডাকাত সন্দেহে নাবু মিয়ার ঘর থেকে তাঁর জামাই ও তাঁর দুই বন্ধুকে ডাকাত সন্দেহে ঘর থেকে বের করে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়।
ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনিতে আহত শাহজাহান বলেন, `আমি রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করি। আমি কাজের জন্য ইসমাইলের কাছে যাই। পরে কিছু লোক আমাদের ডেকে ঘর থেকে বের করে পিটিয়ে আহত করে। আমি বেঁচে যাই। বাকি দুজন নিহত হয়।'
নিহত ইসমাইলের মা মিনু আরা বেগম বলেন, `আমার ছেলে কোনো ডাকাতির ঘটনায় জড়িত না। নুর মিয়া ছেলেকে রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গেছিল। তারা যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, আমাদের কাছে বিচার দিত। পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার কারও নাই।'
স্থানীয় দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, `আহত ও নিহতেরা খারাপপ্রকৃতির লোক। তবে গতকাল রাতে এলাকায় কোনো ডাকাতি হয়নি। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে খবর দিই এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।'