পোশাকের ওপর নানা ধরনের কারুকাজের জন্য খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর ঝাউতলা ও ওয়্যারলেস এলাকার বিহারিপল্লি। গত কয়েক বছর এ পল্লির কারিগরেরা ঈদকেন্দ্রিক কাজে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এবার পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। ভারতীয় কাপড় আসা কমে যাওয়ায় ঈদুল ফিতর ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে বিহারিপল্লিতে।
কারিগরেরা জানান, বিহারিপল্লির জারদৌসি ও কারচুপির সুনাম রয়েছে। কিন্তু বাজারে সুলভে পাওয়া তৈরি পোশাক ও বিদেশি কাপড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আগে শতাধিক কারখানা থাকলেও এখন ১৫-২০টিতে নেমে এসেছে। তবে ঈদ উপলক্ষে কয়েক মাস ধরে আবারও ব্যস্ততা বেড়েছে তাঁদের।
চট্টগ্রাম নগরীর বিহারি-অধ্যুষিত ঝাউতলা ও ওয়্যারলেস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কারখানাগুলোতে বেশ ব্যস্ততা বেড়েছে। দিনরাত সমানতালে কাজ চলছে। রাত জেগেও কাজ করছেন কারিগরেরা। ঝাউতলা স্কুল ক্যাম্প সড়কে কাঠের ফ্রেমে টান টান করে আটকানো কাপড়ে আঁকা নকশায় জারদৌসি কাজ করছিলেন রুবেল আহমেদ। তিনি জানান, আগের চেয়ে এখন কাজের চাপ বেশি। ভালো পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। ১৮ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত বলেও জানান তিনি।
এর পাশেই নকশা আঁকছিলেন কারখানার মালিক মোহাম্মদ। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি কারচুপি ও জারদৌসি শিল্পের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।
মোহাম্মদ বলেন, বছরজুড়ে ফরমায়েশি কাজ থাকে। এ কাজের মূল্য নির্ধারণ হয় নকশার ওপর ভিত্তি করে। কাজভেদে প্রতিটি নকশার জন্য নেওয়া হয় ২ হাজার থেকে লাখ টাকারও বেশি। নারীরাই মূলত কাজ করেন ঘরে বসে। আবার অনেক পুরুষও নিজ ঘরে কাজ করেন।
কারচুপি ও জারদৌসি শিল্পের প্রধান উপকরণ জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, পাথর, সিল্কের কাপড়। উপকরণগুলোর প্রায় সবকিছু ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনা হয়। কিছু আসে পাকিস্তান ও চীন থেকেও। আমদানির পাশাপাশি কিছু তৈরি হয় বাংলাদেশেও। সব মিলিয়ে বর্তমানে উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় গ্রাহকদের চাহিদামাফিক কম দামে কাজ করা যায় না বলেও জানালেন তাঁরা।
ওয়্যারলেস এলাকার নূরনাহার ৫ বছর ধরে কারচুপি ও জারদৌসির কাজ করছেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী। নূরনাহার বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দু-তিন মাস আগে থেকেই বিভিন্ন কারখানায় ডাক পড়ছে কারিগরদের। আমরা এখন দিনরাত কাজ করছি। দম নেওয়ারও ফুসরত নেই।’