কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে আশি বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়েকে হাত-মুখ বেঁধে রেখে ঘর ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার বিকেলে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভীরকাঁটা গ্রামের নদীর পশ্চিমকুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা রশিদা খাতুন আক্ষেপ নিয়ে বসে আছেন। তাঁর দুই মাদ্রাসা পড়ুয়া নাতনি জোবাইদা ও বুলবুল আক্তার খোলা আকাশের নিচে বইপত্র ও ঘরের কিছু আসবাবপত্র নিয়ে কান্নাকাটি করছে।
নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বুলবুল আক্তার বলেন, ‘বই পত্র সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আল্লাহর দুনিয়ায় কি আমাদের দেখার কেউ নেই? আমরা কি এমন বড় দোষ করেছি যে আমাদের ঘর বাড়ি ভেঙে ফেলে আমাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।’
কে বা কারা ঘর ভেঙে জমি দখল করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃদ্ধা রশিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে জানান, একই এলাকার মো. ইউনুচ ও আবুল মনছুর প্রকাশ লেবু দুই ভাই মিলে আরও ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে গত শুক্রবার বিকেল থেকে সারা রাত বৃদ্ধা রশিদা খাতুন ও তাঁর মেয়ে দিলদার বেগমের চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে খেতের জমিতে ফেলে রাখে। শুক্রবার বিকেলে এই দুই ভাই ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা মিলে ঘর ভেঙে ফেলে জমি দখলে নেয়।
ঘটনার বিষয়ে পাশের প্রতিবেশীর মোবাইল ফোনে ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ও ছবি আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মো. ইউনুচ ও তাঁর ভাই আবুল মনছুর প্রকাশ লেবুসহ কয়েকজন ঘর ভাঙছেন।
পরদিন শনিবার সকালে এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি হাত, মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেন। উদ্ধার করে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার বিষয়ে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের এমইউপি সদস্য মো. ইউনুচ বলেন, ‘এমন পাশবিক ও অমানুষিক ঘটনা আমি জীবনে আমার এলাকায় দেখিনি। একজন দরিদ্র বৃদ্ধা মহিলার ঘর ভেঙে জমি দখল করে নেওয়াটা অমানবিক।’
এ বিষয়ে তিনি তাঁর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছেন বলে জানান।
একই এলাকার মৌলভী হাসেম সরোয়ারী ও ঠান্ডা মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় বৃদ্ধা রশিদা খাতুন তাঁর পাঁচ মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে নিয়ে এই ঘরে থাকতেন। তাঁর কোনো ছেলে সন্তান নেই। এমন অসহায় বৃদ্ধাকে হাত-মুখ বেঁধে তাঁর ঘর ভেঙে জমি দখল করে নেওয়াটা মানা যায় না।’
ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁদের বাড়িতে গিয়েও তাঁদের পাওয়া যায়নি। ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাঁদের।
এরই মধ্যে ঘটনার বিষয়ে রামু থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধা রশিদা খাতুনের মেয়ে দিলদার বেগম।
আক্ষেপ জানিয়ে দিলদার বেগম বলেন, ‘ঈদের আগে আমাদের বেঁধে রেখে এভাবে ঘর বাড়ি ভেঙে দখল করে নিল চিহ্নিত দুই ভাই। অথচ অভিযোগ দেওয়ার পরেও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ফরহাদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে তাঁরা দেরিতে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পরই আমি এবং সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এই অমানবিক ঘটনা নিয়ে ইউনিয়নের মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এলাকার একাধিক বাসিন্দা বৃদ্ধা রশিদা খাতুনের প্রতি এমন অমানবিক নির্যাতনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।