রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধে বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, দুই বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে এ কমিটির সদস্য করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে চিহ্নিত করা অবৈধ ক্রসিংগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে বলে রেলওয়ে জানিয়েছে।
সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন। তিনি জানান, পূর্বাঞ্চলে এক হাজার ৫৩৩টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ ছিল মাত্র ৪৩৪টি, অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৯০০ এর বেশি।
এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলো পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৮০টি অবৈধ ক্রসিং বৈধের তালিকায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এই ১৮০টি বৈধ ক্রসিংয়ে লোক নিয়োগসহ নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার তা করা হবে।
সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকায় ডেমু ট্রেন ও পরিবহনের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এঁদের মধ্যে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যও রয়েছেন। যদিও দুর্ঘটনায় বাসের চালক সবচেয়ে বেশি দায়ী ছিলেন বলে রেলওয়ের তদন্তে বলা হয়। তবে গেটম্যান কম দায়ী হলেও সময়মতো বার ফেলেননি বলে জানানো হয় তদন্তে।
পূর্বাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কমিটির সদস্যরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্রসিংগুলো পরিদর্শন করবেন। অবৈধ ক্রসিংগুলোর বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেবেন। অর্থাৎ কীভাবে ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা যায়, সেসব বিষয়ে প্রতিবেদনে থাকবে। বন্ধ করতে হলে বন্ধ করার সুপারিশ আর বেশি প্রয়োজন হলে অবৈধ ক্রসিং কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটির ব্যাখ্যা দেবেন।
প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেলওয়েতে যেগুলো অনুমোদন ছাড়া করা হয়েছে, এগুলো সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। পূর্বাঞ্চলের ১৫৩৩টি অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১৪০ টিরও বেশি কুমিল্লা অঞ্চলে। লাকসাম-নোয়াখালী রুটে ৪০টি, লাকসাম-চাঁদপুর রুটে ৩৭টি ও লাকসাম-আখাউড়া রুটে ৫০টি এবং লাকসাম থেকে চৌদ্দগ্রাম রুটে ১৫টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
এ ছাড়া সিলেট-আখাউড়া অংশে প্রায় ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথেও অর্ধশতাধিক অবৈধ ক্রসিং রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় দেড় শতাধিক অবৈধ ক্রসিং আছে। এর মধ্যে মিরসরাই উপজেলা এলাকার ৩০ কিলোমিটারজুড়ে ৭০টি লেভেল ক্রসিংই অবৈধ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে সীতাকুণ্ডের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে লেভেল ক্রসিং আছে ৮৫টি। এর মধ্যে রেলওয়ের অনুমোদন আছে ৩০ টির। এ ছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও ১৫টি পরিচালনা করছে। সব মিলিয়ে ৬০টি লেভেল ক্রসিংয়ের প্রতিটি যেন এক একটি মৃত্যুফাঁদ। ফলে এসব রুটে গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।