দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবিদ্বারে চার সহপাঠীর মারধরে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত অনীক চন্দ্র বর্মণ জীবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং ওই এলাকার অটোরিকশা চালক অর্জুন চন্দ্র বর্মণের একমাত্র ছেলে।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রের বাবা কাউকে অভিযুক্ত না করে দেবিদ্বার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার জীবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিফিনের বিরতি চলাকালে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের, রনি ও চতুর্থ শ্রেণির জাহিদুলসহ চারজন অনীককে বেধড়ক কিলঘুষি মারলে অনীক অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুই দিন গ্রাম্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নেয় তার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার রক্তবমি শুরু হয়। তখন ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ২টায় সে মারা যায়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ গতকাল শুক্রবার রাতে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে।
বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী তপন বর্মণ জানান, বিরতি চলাকালে কয়েকজন ছাত্র তুচ্ছ কারণে অনীককে কিলঘুষি মারে। অনীক প্রতিবাদ করলে সহপাঠীরা আরও মারধর করে।
স্থানীয়রা জানান, অনীকের বয়স যখন ৬ বছর এবং তার ছোট বোন সুস্মিতা বর্মণের বয়স তিন মাস তখন তাদের মা রূপসী রানী বর্মণ মারা যান। অনীকের বাবা অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে অনীকের বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। অনীক শান্ত প্রকৃতির ছেলে, তাকে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মারধর করত।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, ‘ঘটনার সময় টিফিনের বিরতি চলছিল। আমরা তখন অফিস কক্ষে বসা ছিলাম। অনীকের মা এসে ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ করেন। এরপর অন্য ছেলেদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করি, তারা একজন অপরজনকে কিলঘুষি মেরেছে বলেছে, পরে আমি তাদের মিলমিশ করে দিয়েছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনীক সম্ভবত আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। কেউ কেউ বলে, তার জন্ডিস রোগ ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একে অপরকে মেরেছে এটি শুনেছি।’
এদিকে সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় অর্জুন চন্দ্র বর্মণ। তিনি একটু পর পর বলছেন, ‘ছেলেকে কিলঘুষি, লাথি মেরে বুকের পাঁজর ভেঙে ফেলা হয়েছে। না হলে রক্তবমি করবে কেন। আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। তার বাবা থানায় অপমৃত্যুর ডায়েরি করেছেন। কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে জানা যাবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’